মেড ইন চায়না: টুথব্রাশ ও টয়লেট পেপার
মেড ইন চায়নার ১৭তম পর্বে সাথে আছি আমি ফয়সল আবদুল্লাহ...আজকের পর্বে থাকছে চীনের দুটো আবিষ্কার টুথব্রাশ ও টয়লেট পেপারের কথা।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার দিন শুরু হয় একটি বস্তু হাতে নিয়ে। দিনটা শেষও হয় ওই পণ্যটি দিয়ে। মানুষটা ধনী হোক বা দরিদ্র, পেশায় দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হোক কিংবা রোজকার খেটে খাওয়া কোনো শ্রমিক, বিছানা ছাড়ার পর বস্তুটা হাতে উঠবেই। টুথব্রাশ নামের সর্বজনীন এই পণ্যটি ছাড়া সভ্য মানুষদের দিন শুরুই হয় না। দিন শুরু করা সেই টুথব্রাশটা কিন্তু পুরোপুরি মেড ইন চায়না।
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতো চীনারা। তাই ৬৩৫ সালের পর থেকে চীনা সন্নাসীদের দেখা গেল পশুর পশম লাগানো বিশেষ এক ধরনের কাঠের প্রান্তে দিয়ে দাঁত ঘষছেন তারা। এমনকি সেটা দিয়ে জিবও পরিষ্কার করতে দেখা যেত তাদের। সেই চীনা সন্ন্যাসীদের দেখাদেখিই দাঁত পরিষ্কারে কাঠের তৈরি ব্রাশের ব্যাপারে জানতে পারেন ভারতীয়রা। তারা তখন এর নাম দিয়েছিল দন্তকাষ্ঠ। অর্থাৎ চীনের পরই ভারতে আসে টুথব্রাশ।
অবশ্য বিশেষ কিছু গাছের নরম কাঠ চিবিয়ে বা ঘষে দাঁত পরিষ্কারের বিষয়টি প্রচলিত ছিল বহুকাল আগে থেকেই। তবে আধুনিক টুথব্রাশ বলতে আমরা যা বুঝি, সেটা এসেছে আরও অনেক পরে। এখানে টুথব্রাশ বলতে আমরা মূলত চীনাদের তৈরি ব্রিসল যুক্ত ব্রাশের কথাই বলছি, যার সঙ্গে যুক্ত থাকত একটা হাতল।
৬১৯ সাল থেকে চালু হয় থাং রাজবংশের শাসনামল। ওই সময় আবিষ্কার হয় ব্রিসল যুক্ত টুথব্রাশ। তখন কিছু প্রাণীর পশম বিশেষ করে ঘোড়ার লেজের পশম ব্যবহার করা হতো ব্রিসল তৈরিতে।
টুথব্রাশের হাতল তৈরিতে বেশ আভিজাত্যের পরিচয় দিয়েছিলেন ওই সময়কার চীনা উদ্ভাবকরা। রাজ দরবার ও সম্ভ্রান্তদের জন্য দামি টুথব্রাশ তৈরিতে তারা ব্যবহার করতেন বাঘের হাড়। ১২২৩ সালে এক জাপানি জেন মাস্টার তোজেন কাইজেন লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন যে, তিনি চীনে সন্ন্যাসীদের এমন এক ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে দেখেছেন, যার হাতল বানানো হতো ষাঁঢ়ের হাড় দিয়ে এবং ব্রিসল বানানো হতো ঘোড়ার লেজের চুল দিয়ে।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে জেনে নিই প্রাচীন টুথব্রাশ নিয়ে কিছু তথ্য
· প্রথম দিকের টুথব্রাশে যে প্রাণীর পশম ব্যবহার করা হতো তা আসতো চীনের উত্তরাঞ্চল থেকে। কারণ উত্তরাঞ্চলের প্রচণ্ড শীতের কারণে পশুর পশমগুলো শক্ত ও মসৃণ হতো।
· চীন থেকে ইউরোপে টুথব্রাশের কথা পৌঁছে দিয়েছিল পর্যটকরা। তবে ইউরোপজুড়ে টুথব্রাশের প্রচলন শুরু হয় সতের শতকের দিকে।
· চীনের চিয়াংশু প্রদেশের হাংচি টাউনকে বলা হয় টুথব্রাশের রাজধানী। ১৬৫০ সালের পর ছিং রাজবংশের সময় এখানকার এক কৃষক ষাঁড়ের হাড়ের মধ্যে পশুর লোম বসিয়ে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে টুথব্রাশ তৈরি শুরু করেন। এখন এ শহরে বছরে উৎপাদন হয় সাড়ে সাতশ কোটি টুথব্রাশ।
চীনের চিয়াংশু প্রদেশের হাংচি টাউনশিপের ৪০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় আছে ২ হাজারেরও বেশি টুথব্রাশ কারখানা। এখান থেকে টুথব্রাশ রপ্তানি হয় ৮০টিরও বেশি দেশে। মজার বিষয় হল, বিশ্বের প্রতি তিনটি টুথব্রাশের মধ্যে একটি আসে হাংচি থেকে।