মেড ইন চায়না: পর্ব-১৫: রেশম
কিন্তু রেশমের এত কদর কেন? কেনই বা চীনের এ আবিষ্কারের জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিল বাকি বিশ্ব? প্রথমত, রেশমের কাপড় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি তন্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। আভিজাত্য প্রকাশ ও বাণিজ্যিক উপকরণ হিসেবে রেশম ছিল অন্যতম সেরা একটি উপকরণ। তবে আরও কিছু কারণও আছে। চলুন শুনি।
· রেশমকে বলা হয় হাইপোএলার্জেনিক। ত্বক যতই স্পর্শকাতর হোক না কেন, রেশমের স্পর্শে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে না।
· রেশম আপনাকে মশা থেকেও বাঁচাতে পারবে। রেশম মসৃণ ও পাতলা হলেও এর ভেতর দিয়ে মশা হুল ফোটাতে পারে না।
· প্রাকৃতিক অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল হিসেবেও কাজ করে রেশম। এর স্পর্শে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক বেড়ে উঠতে পারে না।
· কিছু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সিল্কের বালিশে মুখ রেখে ঘুমালে মুখে বলিরেখা সহজে পড়বে না। সিল্কে থাকা প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিডের কারণেই এমনটা হয়।
· রেশমের আরেকটি বড় গুণ হলো এটি প্রাকৃতিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রকের কাজ করে। শীতের সময় শরীরকে গরম ও গরমের সময় শীতল রাখতে পারে সিল্ক।
এবার জেনে নেওয়া যাক চীনের রেশম বাণিজ্যের হালচাল। বিশ্বে সিল্কের উৎপাদন ও রপ্তানি দুটোতেই শীর্ষে আছে চীন। গত বছর চীন থেকে রেশম রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৮০ কোটি ডলার মূল্যের। চীনের চিয়াংশু প্রদেশের সুচৌ শহরকে বলা হয় রেশমের রাজধানী। সেখানে একই সঙ্গে রেশমপোকার চাষ থেকে শুরু করে, রেশমগুটি সংগ্রহ, সিল্ক উৎপাদন ও বুননের সমস্ত কাজই হয়।
গড়ে এখন বছরে চীনে সিল্ক তৈরি হয় প্রায় দেড় লাখ টন। যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে উৎপাদিত হয় গড়ে ৩০ হাজার টন। তবে রেশমের উৎপাদন সারা বছর একই রকম থাকে না। এটি নির্ভর করে রেশমগুটির মৌসুমের ওপর। বিশেষ করে মে’র শেষের দিকে রেশমপোকার গুটি তৈরি হয়। চিয়াংশুর পাশাপাশি ওই সময় চেচিংয়াং ও সিছুয়ানেও শুরু হয় রেশমগুটি পালনের কাজ।
চীনের সুবিশাল ঐতিহ্য সিল্ক। আবার এই রেশমের হাত ধরেও চীনে গড়ে উঠেছে আরও কিছু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সিল্কের ওপর ধর্মীয় ছবি এঁকে চীনের সিচাংয়ে তৈরি হয় বিশেষ চিত্রকর্ম থাংকা, যা কিনা তিব্বতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে।
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাইয়ান
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী