মেড ইন চায়না: পর্ব-১৫: রেশম
এরপর একটি দুটি রেশমগুটির দিয়ে কাপড় বোনার মতো তন্তু হচ্ছিল না দেখে লেইচু তার স্বামী হুয়াংতিকে বলেন, তার কয়েকটি তুঁত গাছ চাই। কারণ তিনি দেখেছেন, বিশেষ জাতের ওই কীটটি শুধু মালবেরি বা তুঁত গাছের পাতা খায়। সেই থেকেই চীনে প্রচলন শুরু হয় রেশমের। আর চীনের শেখানো পথেই রেশম তৈরি হচ্ছে এখনও। তুঁতগাছের চাষ, রেশমগুটি থেকে সিল্ক তৈরি, এসব প্রক্রিয়াকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অজস্র কর্মসংস্থান।
এবার জানা যাক রেশম নিয়ে কিছু মজার তথ্য
· শুরুর দিকে রেশম থেকে কাপড় তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল ছিল বলে ওই সময় এটি ছিল বেশ দামি একটি পণ্য। তাই প্রাচীন চীনে শুধু সম্রাট, তার পরিবার এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সিল্কের পোশাক পরার অনুমতি ছিল। পরে ছিং রাজবংশের সময় এ নিয়ম শিথিল করা হয়।
· প্রাচীন চীনে রেশম এতটাই মূল্যবান ছিল যে কিছু সময়ের জন্য এটাকে মুদ্রা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। হান রাজবংশের সময়, কিছু সরকারি কর্মচারীর বেতন দেওয়া হতো রেশম দিয়ে। কৃষকরাও তাদের কর পরিশোধে শস্যের পাশাপাশি রেশম ব্যবহার করতো। এমনকি তখন কোনো কিছুর দাম পরিমাপের একক হিসেবেও রেশমের দৈর্ঘ্য ব্যবহার করা হতো।
· রেশম বেশ শক্তিশালী প্রাকৃতিক তন্তু। তাই পোশাক ছাড়াও এটি দিয়ে তৈরি হতো বাদ্যযন্ত্র, ধনুক, মাছ ধরার সুতা। কম খরচে কাগজ তৈরির আগে লেখালেখি ও ছবি আঁকার কাজেও লাগতো রেশম।
· একটি রেশমগুটি থেকে একটি লম্বা সুতা পাওয়া যায়, যার দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটারও হতে পারে।
----
চীন থেকে কী করে অন্যরা পেল রেশমের ফর্মুলা? আবিষ্কারের পর অন্তত এক হাজার বছর সিল্ক তৈরির ফর্মুলাটি ছিল অতিগোপনীয়। পরে অবশ্য কিছু হাত ঘুরে রেশমের রেসিপি চলে যায় ভারতসহ ভূমধ্যসাগরীয় কিছু দেশে। ইউরোপে সিল্ক আসে তুলনামূলক বেশ দেরিতে। দেড় হাজার বছর আগে বাইজেনটাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের আমলে কয়েকজন নেস্তোরিয়ান সন্নাসী এসেছিলেন চীনে। তারাই গোপনে চীন থেকে নিয়ে যান রেশমগুটি। আর রেশমগুটি পাচার করতে তারা ব্যবহার করেছিলেন ফাঁপা বাঁশের নল। এভাবেই সিল্ক সম্পর্কে জানতে পারে ইউরোপীয়রা।