চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪৪
তার বাবা ছিলেন পণ্ডিত ব্যক্তি। ওয়াং পো বেড়ে উঠেছিলেন বইকে সঙ্গী করেই। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। ছয় বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ন’বছর বয়সে বই লেখেন। পনের বছর বয়সে তাকে রাজদরবারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
তিনি ছিলেন স্বভাব কবি। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করতে পারতেন। একবার এক গভর্নরের আমন্ত্রণে ভোজসভায় যোগ দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রচনা ও কবিতা লিখে সবাইকে মুগ্ধ করে দেন ওয়াং বো।
তার লেখা ‘থাং হুয়া গোশিয়ু’ বইটি হাজার বছর ধরে চীনা পাঠকদের মধ্যে জনপ্রিয়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা হলো ‘সং তুশাওফু চি রেন শুচৌ’। তিনি ইয়াংসি নদী নিয়ে এমন একটি কবিতা লেখেন যা চিরকাল ধরে এই নদীর সৌন্দর্য বহন করে নিয়ে চলেছে অনাগত কালের পাঠকের মনে।
তিনি একটি কবিতা লিখে সেটি বেশ কিছুদিন ধরে রেখে দিতেন। তারপর পরিমার্জনা করে সেটি প্রকাশ করতেন। বই পড়ার সময় তার অভ্যাস ছিল নোট নেয়া। তার লেখা এ ধরনের বারোটি নোটবুক রয়েছে যা সাহিত্যপাঠের চিরন্তন কৌশল হিসেবে মনে করা হয়।
৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। সম্ভবত বাবার সঙ্গে দেখা করে রাজদরবারে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়েছিল। তার একটি কবিতা এখানে দিচ্ছি।
কবিতাটির নাম ‘ফেয়ারওয়েল টু প্রিফেকট ডু’ বা প্রশাসক তুকে বিদায়
প্রাচীরঘেরা নগরী ছেড়ে তুমি চলে যাচ্ছ বহুদূরে
নদীর তীরবর্তি কুয়াশাঢাকা ভূমিতে।
এই বিচ্ছেদে আমি বিষণ্ন ও আতঙ্কিত
কারণ আমরা দুজনেই ছিলাম এখানে আগন্তুক।
যদি তোমার এমন বন্ধু থাকে যে ছিল মনের কাছাকাছি
তাহলে পথের দূরত্ব তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না
এই রাস্তার মোড়ে আমরা পরষ্পরকে বিদায় জানাই
নারীদের মতো চোখের জল ফেলো না বন্ধু।
এই কবিতায় কবি ওয়াং পো তার এক বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছেন। তার বন্ধুর নাম তু। জেলাপ্রশাসক হিসেবে চাকরি নিয়ে শহর ছেড়ে দূরবর্তি অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। কে জানে কবে আবার তার সঙ্গে দেখা হবে? বন্ধুর প্রতি বিদায় জ্ঞাপন এবং তার বিচ্ছেদে কবিতা লেখার রীতি ছিল প্রাচীন চীনে।
তিনি মূলত ব্যক্তিগত অনুভব নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সেই সময়ে প্রচলিত ‘কোর্ট পোয়েটরি’ বা দরবারি কবিতার ধারাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
কিছু কবিতায় তিনি সেই সময়কার রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে তার অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন। তিনি চীনের থাং রাজবংশের প্রধান চারজন কবির অন্যতম। চীনা পাঠ্যবইতে তার কবিতা হাজার বছর ধরেই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।
---------------------------------------------------------------------------
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।