চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৯
তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ‘এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ’ উত্থাপনের দশম বার্ষিকীতে ‘সমৃদ্ধির পথে’ ডকুমেন্টারিটির বিশ্বব্যাপী প্রিমিয়ার হয়েছে। এই সিল্ক রোডের গল্পগুলো এবং চীনের গল্পগুলো যা আবেগ এবং স্বপ্নে প্রস্ফুটিত হয় তা অবশ্যই সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে আরও উজ্জ্বলভাবে প্রস্ফুটিত হবে।
সিএমজি নির্মিত, ছয় পর্বের তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে চীন এবং বিআরআইয়ের অংশীদার দেশগুলো গত দশকে জয়-জয় সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য তাদের হাতে হাত মিলিয়েছে।
তথ্যচিত্রটি বিগত দশকে বিআরআইয়ের মাইলফলক অর্জনগুলোকে তুলে ধরেছে এবং মানবজাতির একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায় গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে উদ্যোগটির ঐতিহাসিক মূল্য এবং তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছে।
তথ্যচিত্রটি প্রচারের পরপরই চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং প্রশংসা পেয়েছে।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।
২. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
চিয়া তাও: তিক্তরসের কবি
চিরায়ত চীনা কবিতার রয়েছে নানা রূপ, নানা রস। কেউ কবিতা লিখেছেন প্রেম, কেউ বা প্রাকৃতিক দৃশ্য নিয়ে। কবি চিয়া তাও এর কবিতায় ফুটে উঠেছে জীবনের তিক্ততা। জীবন সম্পর্কে চিয়া তাও খুব আশাবাদী ছিলেন না। আবার নৈরাশ্যবাদী হওয়া বা হা হুতাশ করাটাও তার ধাতে ছিল না। তিনি জীবনের কঠোর বাস্তবতা ও তিক্ততাকে দেখেছেন নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
চিয়া তাও এর জন্ম ৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে বেইজিংয়ের কাছে। তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি। প্রথম তারুণ্যে তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। পরবর্তিকালে তিনি থাং রাজবংশের রাজধানী ছাংআন নগরে আসেন। তিনি বিখ্যাত চীনা দার্শনিক, কবি, রাজনীতিবিদ হান ইয়ুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। চিয়া তাওর লক্ষ্য ছিল রাজকীয় চাকরি জন্য চিনশি পরীক্ষা দেয়ার। বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হন চিয়া তাও। তিনি গীতিময় কবিতা ও বর্ণামূলক কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তার সেসব কবিতা খুব একটা প্রশংসা পায়নি। তার কবিতাকে খুব সংক্ষিপ্ত, অগভীর এবং কৃত্রিম বলে সমালোচনা করা হয়।
তবে পরবর্তিকালের বিশেষজ্ঞরা তার প্রতি অনেকটা সুবিচার করেছেন। তাদের মতে চিয়া তাও এর কবিতার তিক্তরস তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
চিয়া তাওর দুটি কবিতা।
অনুপস্থিত প্রভুর প্রতি
পাইন গাছের নিচে এক ছোট শিশুকে প্রশ্ন করলাম
সে বললো, প্রভু ভেষজ সংগ্রহে ওই দিকে গেছেন
পাহাড়ের ঢালে সে একা দাঁড়িয়ে আছে
মেঘ এত ঘন যে সে জানে না সে কোথায়।
তলোয়ারধারী
তরোয়ালটি পালিশ করছি দশ বছর ধরে
এর মরিচা পড়া প্রান্ত কখনও নামেনি পরীক্ষায়
এখন আমি এটা ধরে আপনাকে বলছি জনাব
এখানে কি কেউ আছেন যার প্রতি অবিচার হয়েছে?
দুটি কবিতাই প্রতীকি এবং ব্যাঙ্গাত্মক। দ্বিতীয় কতিায় একজন বীর তার তরোয়ালকে কেবলি পালিশ করেছে, চকচকে করেছে। কিন্তু সে তরোয়ালটিকে কখনও ব্যবহার করেনি। তার বীরত্বেরও কোন পরীক্ষা হয়নি এ যাবৎ। এতদিন পরে সে প্রশ্ন করছে এমন কি কেউ আছে যার প্রতি অবিচার করা হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে অবিচার করা হয়েছে তার নিজেরই প্রতি। কারণ সে নিজের শক্তিসামর্থ্যকে কখনও ন্যায়ের পক্ষে ব্যবহার করেনি।
চিয়া তাও মৃত্যুবরণ করেন ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কবিতায় কর্কশতা ও নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য আজও চিরায়ত চীনা সাহিত্যে বিশেষ স্থান রয়েছে থাংযুগের কবি চিয়া তাও এর।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।
---------------------------------------------------------------------------
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।