চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩২
সিএমজির ধারনকৃত এ গালা উৎসব অনুষ্ঠান মধ্য-শরৎ উৎসবের সন্ধ্যায় প্রচারিত হবে। আর এ জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন গোটা চীনের মানুষ।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।
৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
ছাং চিয়ান: প্রকৃতি প্রেমিক কবি
ছাং চিয়ান ছিলেন থাং রাজবংশের সময়কার একজন কবি। তার জন্ম ৭০৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে। অষ্টম শতাব্দির প্রথম যুগে তিনি কবিতা লিখেছেন। বিখ্যাত থাং কবিতার সংকলন তিনশ থাং কবিতায় তার দুটি কবিতা পাওয়া যায়।
তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে সাফল্য পাননি। সেনাবাহিনীতেও তিনি কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। ছাং চিয়ান ছিলেন মূলত প্রকৃতি প্রেমিক কবি। তিনি কয়েক বছর বিভিন্ন স্থান পর্যটন করেন এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করেন। শেষ জীবনে তিনি প্রকৃতির নির্জনতার মধ্যে শান্তি খুঁজে পান এবং নির্জন স্থানেই বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।
তার যে দুটি কবিতা তিনশ থাং কবিতার সংকলনে স্থান পেয়েছে সে দুটিই মূলত বিখ্যাত। তার সৃষ্টিকর্মের খুব কম সংখ্যক কবিতাই কালের করাল গ্রাস এড়িয়ে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে। যুদ্ধের দুর্গ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। সেই সময়ে তিনি পর্বত এবং মন্দিরের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তিনি একটি বিশেষ রীতির কবিতা লেখার জন্য খ্যাতি পান। সেটি হলো পাঁচ ক্যারেকটার বা পাঁচ শব্দের কবিতা। এক্ষেত্রে প্রতি লাইনে পাঁচটি করে ক্যারেকটার থাকে।
তার যে দুটি কবিতা বিখ্যাত সে দুটি হলো, ‘ওয়াং ছাংলিয়ের ফিরে আসা ’ এবং ‘ ভগ্ন পার্বত্য মন্দিরে একজন বৌদ্ধেরফিরে আসা’। প্রথম কবিতাটিতে আরেকজন বিখ্যাত থাং কবি ওয়াং ছাংলিংয়ের কথা বলা হয়েছে। কবি ওয়াং ছাংলিং ছিলেন কবি ছাং চিয়ানের বিশেষ বন্ধু।
দ্বিতীয় কবিতাটিতে একটি পার্বত্য বৌদ্ধ-মন্দিরের বর্ণনা রয়েছে।
‘ ভগ্ন পার্বত্য মন্দিরে একজন বৌদ্ধের ফিরে আসা’
দিবসের প্রথম আলোয় আমি এসেছি এক প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে
সকালে সূর্যের আলো তখন সবেমাত্র পৌঁছেছে দীঘল বৃক্ষের শিখরে
বাতাস বয়ে যাওয়া পায়ে চলা পথ চলে গেছে গভীর আশ্রয়ে
মঠ-সন্ন্যাসীর কক্ষ ভরে আছে ফুলের নিবিড় সৌরভে
পর্বতের আলোর আভায় উড়ন্ত পাখির ডানায় কত না শান্তির আভাস
ছায়া ঢাকা দীঘির জলে মন খোঁজে প্রশান্তির বিলাস
জগতের সব কোলাহল এখানে নীরব নিস্তব্ধ জানি
আমি শুধু শুনি মন্দিরের সুমধুর ঘন্টার ধ্বনি।
এই কবিতায় এক শান্তিময় জীবনের ছবি আঁকা হয়েছে যা প্রকৃতির সান্নিধ্য-ধন্য। ছাং চিয়ান চীনের সাধারণ মানুষের চিরকালীন শান্তির সবুজ জীবনের আকাংখাকে তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। তিনি এমন এক শান্তিময় জীবনের ছবি একেঁছেন কোন যুদ্ধের ঘনঘটা, সংগ্রামের তীব্রতা, উন্নতির কঠোর প্রতিযোগিতা নেই।
সম্প্রতি চীনে কবি ছাং চিয়ানের জীবনের উপর ভিত্তি করে ‘চাং আন’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
কবি ছাং চিয়ান চিরায়ত চীনা সাহিত্যে একজন প্রকৃতি প্রেমিক ও শান্তিময় জীবনের রূপকার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।
---------------------------------------------------------------------------
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।