চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২৯
চীনের আরেকটি ফিল্ম স্টুডিও চায়না ফিল্ম গ্রুপ করপোরেশনও চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভালো আয়ের কথা জানিয়েছে। বছরটিকে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মাইলফলক বলেও অভিহিত করেন এর চেয়ারম্যান ফু রুছিং।
‘২০২৩ সালে, আমরা প্রকৃত প্রযোজনা প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছি। এ বছর, আমরা একই সময়ে চার বা পাঁচটি ব্লকবাস্টারের শুটিং শুরু করেছি। আমরা প্রযোজনা, চিত্রগ্রহণ প্রযুক্তি, বিতরণ এবং স্ক্রীনিং থেকে সমস্ত দিকগুলোতে মানোন্নয়নে আরও উদ্যোগ নিয়েছি। তাই ২০২৩ চায়না ফিল্ম গ্রুপ কর্পোরেশনের জন্য একটি দুর্দান্ত বছর’।
চলচ্চিত্রের এ সুসময়কে কাজে লাগাতে দুটি প্রতিষ্ঠানই যুদ্ধ ও ইতিহাসভিত্তিক অনেকগুলো ব্লকবাস্টার সিনেমা নিয়ে কাজ করছে-যা অচিরেই উপভোগ করতে পারবেন চীনা দর্শকরা।
৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
ওয়েন থিয়ানসিয়াং: যোদ্ধা-কবি ও জাতীয় বীর
দেশপ্রেম, কর্তব্যজ্ঞান, বিশ্বস্ততা, বীরত্ব- এমন সব মহৎ গুণের সমাবেশ যার মধ্যে দেখা গিয়েছিল তিনি হলেন চীনের সং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত কবি ও লেখক ওয়েন থিয়ানসিয়াং। তিনি শুধু চিরায়ত চীনা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবিই নন, তিনি একজন জাতীয় বীর।
চিয়াংসি প্রদেশের লুলিং বা চিয়ান শহরে ১২৩৬ সালের ৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন ওয়েন থিয়ানসিয়াং। দক্ষিণ সং রাজবংশের শাসনকাল তখন। তরুণ বয়সে রাজকীয় পরীক্ষায় প্রথমশ্রেণীর ফলাফল করে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন ওয়েন। তার ফলাফল এতই ভালো ছিল যে সম্রাট লিচং নিজে হাতে তাকে পুরস্কার দেন।
তিনি দক্ষিণ সং রাজবংশের সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। সেসময় বেইজিংয়ে মঙ্গোলদের ইউয়ান রাজবংশ রাজত্ব করছে। তারা সং রাজত্বকে দখল করার জন্য চারদিক থেকে যুদ্ধ শুরু করে।
ওয়েন সবসময় মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেন। তিনি সবরকম কাপুরুষতার বিরুদ্ধে তীব্রভাবে প্রতিবাদী ছিলেন।
ওয়েন প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। সং সম্রাট তোওয়াগার শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। ওয়েনকে তিনি চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করে সং প্রতিনিধিদের নিয়ে ইউয়ানদের সঙ্গে সন্ধি করতে পাঠান।
মোঙ্গল পক্ষের সেনাপতি বায়ানের সঙ্গে বৈঠকে ওয়েন মোঙ্গলদের দুরভিসন্ধি টের পেয়ে ইউয়ান বাহিনীকে ফিরে যেতে বলেন।
ওয়েন আত্মসমপর্ণে রাজি নয় দেখে বায়ান তাকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গোল সদর দপ্তরে নিয়ে যায়। অসহায়ভাবে ওয়েনকে দেখতে হয় যে সম্রাট তোওয়াগার এবং অন্য সং রাজপুরুষরা আত্মসমর্ণ করছেন। ওয়েন খুব কৌশলে মঙ্গোল শিবির থেকে পালিয়ে যান।
নানচিয়ান প্রদেশে (বর্তমানের ফুচিয়ান প্রদেশের নানফিং) তিনি একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে সমর্থ হন। তিনি বীরত্বের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হন। তবে প্রবল পরাক্রমশালী ইউয়ান বাহিনী তাকে ঘিরে ফেলে এবং চাং হংফান নামের ইউয়ান সেনাপতির নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে বন্দী হন।
চাং হংফান জানতেন ওয়েন একজন বড় বীর। তিনি ওয়েনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন এবং তাকে ইউয়ান বাহিনীতে উচ্চপদে যোগ দিতে বলেন। কিন্তু ওয়েন বারে বারে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
ইউয়ান সম্রাট কুবলাই খান তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে দরবারের একটি উচ্চপদ দিতে চান। ওয়েন বলেন, যদি আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করি তাহলে মৃত্যুর পর আমার বীর শহীদ সহযোদ্ধাদের, বন্ধুদের কাছে কি জবাব দেবো?’
এদিকে তখন একটি বিদ্রোহ ঘনিয়ে আসছিল এবং চ্যান্সেলর ওয়েনকে উদ্ধার করার জন্য মোঙ্গল কার্যালয় দাদু আক্রমণ করার জন্য বিদ্রোহীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে সময় কুবলাই খান বাধ্য হয়েই ওয়েনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১২৮৩ সালের ৯ জানুয়ারি তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তার বয়স তখন মাত্র ৪৬ বছর।
ওয়েন থিয়ানসিয়াংয়ের একটি বিখ্যাত কবিতা-
নিঃসঙ্গ সাগর পাড়ি
পরিবর্তনের পুঁথির ভিতর দিয়ে চলছি,
বড় কষ্টের ভিতর দিয়ে বিকশিত আমি
চারটি দীর্ঘ বছর ধরে শত্রুর বিরদ্ধে মরিয়া হয়ে লড়েছি
উইলো মোচার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমি জনশূন্য হয়েছে
আমি ডুবেছি, সাঁতার দিয়েছি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া শ্যাওলার মতো
বিপদসংকুল এক সৈকতে দাঁড়িয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি
এই অকূল সাগরে আমি ভীষণ একাকী, নিঃসঙ্গ
প্রাচীনকাল থেকে এমন কোনো মানুষ আছে কি
যে এখনও বেঁচে আছে এবং মৃত্যুবরণ করেনি?
ইতিহাসে রেখে যাবো আমার বিশ্বস্ত নাম।
ওয়েন থিয়ানসিয়াংয়ের কবিতা এখনও চিরায়ত চীনাসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
---------------------------------------------------------------------------
প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশিম, শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।