বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২৪

CMGPublished: 2023-07-08 15:52:42
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চিরায়ত চীনা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি থাও ইয়ুয়ানমিং। তাকে বলা হয় শান্ত গ্রাম-জীবনের রূপকার। থাও ইয়ুয়ানমিং থাও ছিয়ান নামেও পরিচিত।

থাও ইয়ুয়ানমিংয়ের জন্ম ৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান চিয়াংসি প্রদেশের চিউচিয়াং সিটির কাছে ছাইসাং নামের পার্বত্য জনপদে। তখন পূর্ব চিন রাজবংশের(৩১৭-৪২০) শাসনকাল চলছে। জন্মসাল ৩৬৫ বলা হলেও সেটি নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। তার জীবনীকার উল্লেখ করেছেন তখন সম্রাট আই এর শাসন চলছে। চীনা পন্ডিত ইয়ুয়ান সিংপাই অবশ্য মনে করেন থাও এর জন্মসাল ৩৫২ খ্রিস্টাব্দ।

এক অভিজাত পরিবারে থাও এর জন্ম। তাদের পরিবারের বাসস্থান ছিল ছাইসাং গ্রামে। এখানে রয়েছে লু পর্বত এবং ফোইয়াং লেক। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। থাও এর কবিতায় তার ছায়া পড়েছে ।

শৈশবে বাবাকে হারান থাও। এতে তাদের পরিবার কিছুটা অর্থকষ্টে পড়ে। তবে এই দারিদ্র্য তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবার দৃঢ় সংকল্পে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কনফুসিয়াসের চিরায়ত দর্শন থেকে শুরু করে অনেক রকম বই তিনি পড়েন। চীনা দার্শনিক লাওসি এবং চুয়াংসির দর্শন তাকে প্রভাবিত করে।

২৯ বছর বয়সে তিনি সরকারি ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রশাসক ধরনের চাকরি করতেন। পরবর্তি ১৩ বছর তার চাকরি জীবনে অনেক উত্থান পতন ঘটে। ৪১ বছর বয়সে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন কয়েক মুঠো ভাতের জন্য আর মাথা নোয়াতে ভালো লাগছে না। প্রকৃতপক্ষে ক্ষোভ, হতাশা ছিল- কিছুটা কর্তৃপক্ষ কিছুটা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার প্রতি। শাসকদের চাটুকারিতা করতে পারতেন না তিনি।

তার জীবদ্দশায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও টালমাটাল ছিল। দুটি বিদ্রোহ ঘটে। আর জীবনের শেষ দিকে তিনি পূর্ব চিন রাজবংশের পতন দেখেন।

তিনি চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন পারিবারিক বাসস্থান ছাইসাং গ্রামে। এখানে শান্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে দেন বাকি জীবন। বেছে নেন সন্ন্যাসীর জীবন। ৪২৭ খ্রিস্টাব্দে কবির মৃত্যু হয়।

থাও তার কবিতায় প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবন, কৃষকের পরিশ্রম, ফসল ফলানোর আনন্দ, শান্ত জীবনের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। সন্ন্যাসী জীবনের শান্তিও তার কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। তার কবিতার চিত্রকল্প অসাধারণ।

‘কৃষকের জীবনে ফিরে আসা’ শিরোনামে তিনি পাঁচটি সিরিজ কবিতা লেখেন। এর একটি শোনাচ্ছি-

দক্ষিণ পাহাড়ের নিচে আমি মটর ও শিম চাষে রত

আগাছায় কোমল অঙ্কুরগুলো বিক্ষিপ্ত ও শীর্ণ মাথানত

ঊষালগ্নে উঠে আমি দ্রুত হাতে জমির আগাছা নিড়াই

সান্ধ্য চাঁদের আলোয় কোদাল কাঁধে বাড়ি ফিরে যাই।

দীর্ঘ ঘাসে ভরা সরু পথ ধরে আমি ধীরপায়ে হাঁটি

সন্ধ্যার শিশির ভিজিয়ে এলোমেলো করে পোশাক পরিপাটি

আমার বেশবাস নিয়ে আর আমি চিন্তা করি না আগের মতো

লালিত উচ্চাকাংক্ষা সব হয়েছে বিগত।

থাও ইয়ুয়ানমিং তার কবিতায় চীনা গ্রামের ও প্রকৃতির যে চিরন্তন ছবি এঁকেছেন তার চিরায়ত চীনা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন অধিকার করে রয়েছে।

---------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

首页上一页123 3

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn