চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-১১: চীন-স্পেন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বর্ষপূর্তিতে যৌথ কনসার্ট
তারুণ্যে ওয়েন উচ্চশ্রেণীর মানুষের বেশ প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী লিংহু থাও তাকে বেশ সুনজরে দেখেন। তখন কবি হিসেবেও ওয়েনের বেশ নাম হয়। ওয়েনের একটি কবিতা ‘পু সা মান’ প্রধানমন্ত্রী বেশ পছন্দ করেন। তিনি কবিতাটি সম্রাটের কাছে নিবেদন করেন এবং বলেন যে নিজেই তিনি এটি লিখেছেন। ওয়েনকে তিনি নিষেধ করেন যেন প্রকৃত লেখকের নাম প্রকাশ না পায়। কিন্তু ওয়েন তার ঘনিষ্ঠদের কাছে প্রকাশ করে ফেলেন যে এটি তার লেখা। কথাটি প্রধানমন্ত্রীর কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হন।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা চিনশিতে যেন কোনভাবেই ওয়েন পাশ না করতে পারেন সেই ষড়যন্ত্র করেন লিংহু থাও। এই ষড়যন্ত্রের কারণে বারে বারে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ওয়েন পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থার উপরেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে যান। তখন তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অন্য চাকরি প্রার্থীদের নকল করায় সাহায্য করতেন।
লি সুই নতুন সম্রাট হয়ে ইয়াং শোও নামে নতুন একজনকে প্রধানমন্ত্রী বানান। নতুন সম্রাটের শাসনে ওয়েনের ভাগ্যের কিছুটা উন্নতি হয়। তিনি বড় চাকরি পান। সেসময় তিনি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় যেসব দুর্নীতি হয় সে বিষয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এতে পুরো ব্যবস্থাটি স্বচ্ছ হয়। তবে এর ফলে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তাকে অপছন্দ করে এবং তার বিরুদ্ধে আবার প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ সময় কবি হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল। সাধারণ ও অভিজাত দুই শ্রেণীর মানুষের কাছেই তিনি প্রিয় হয়ে ওঠেন। ৮৬৬ সালে তার মৃত্যু হয়।
ওয়েন ভালো গান জানতেন। তাই কবিতাগুলোতে সুর দিয়ে পরিবেশন করতেন। তার কবিতার শিল্পগুণও ছিল উচ্চমানের। শ্রোতাদের জন্য তার একটি কবিতা শোনাচ্ছি।
ভোরবেলায় চলে যাওয়া
ঊষালগ্নে জেগে উঠি, গাড়ির ঘন্টাধ্বনি বাজে
কিন্তু ফেলে আসা গৃহের চিন্তায় মন উদাস হয়ে যায়
জীর্ণ সরাইখানায়, চাঁদ ডুবে যাওয়ার পর মোরগ ডাকে
তুষার ঢাকা কাঠের সেতুর উপর পড়ে আছে পদচিহ্ন।
ওক গাছের ঝরা পাতায় ঢাকা পাহাড়ি পথ
প্রস্ফুটিত কমলা গাছে উজ্জ্বল ডাকঘর।
গতরাতে জন্মভূমির স্বপ্নে এখনও বিষণ্ন মন
পুকুরের জলে খেলা করছে বুনোহাঁসের দল।
কবি ওয়েন থিংইয়ুন তার গীতি কবিতার সুললিত ছন্দ আর প্রকৃতির রোমান্টিক বর্ণনায় পরবর্তি যুগের কবিদের উপরও প্রভাব বিস্তার করেছেন। এখনও চীনা প্রকৃতি ও প্রেমের গীতিকবিতার জগতে তার স্থান অনন্য।
----------------------------------------------------------------------
প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, শান্তা মারিয়া
কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।