মানুষ ও প্রকৃতি ২৩
তথ্য ও ভিডিও দেখে জানা গেল সারসটি গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াংয়ের ছিছিহারের কাছে অবস্থান করছিল এবং ওই সময় পাখিটি দক্ষিণে যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এ প্রযুক্তিতে হুনান প্রদেশের তংথিং হ্রদে পাখির অভিবাসন প্রক্রিয়াও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তংথিং হ্রদটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং সুরক্ষিত এলাকা। শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আবাসস্থলও এটি।
হুনান গ্লোবাল মেসেঞ্জার টেকনোলজি কোং লিমিটেডের টেক ডিরেক্টর ছেন চেনরং জানালেন, ‘পাখির পুরো মাইগ্রেশনটি একবারে সম্পন্ন হয়েছিল। সময় লেগেছিল ছয় দিন। এর মধ্যে দুটি ছোট বিরতি ছিল। পুরো উত্তর-দক্ষিণের যাত্রাপথ ছিল ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি। পাখিটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার উড়েছিল। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৯ কিলোমিটার।’
স্যাটেলাইট ট্র্যাকার থেকে পাখির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। যেমন, চীনা গবেষকরা জানতে পারেন, সেই সারসটি গতবছরের ২৩ নভেম্বর দুপুর একটায় ২৩ কিলোমিটার গতিতে ৬৬০ মিটার উঁচুতে উড়েছিল।
বেইতৌ স্যাটেলাইট ডেটায় জানা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা কোথায় কতদিন উড়েছে, কোথায় কতক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এসবের বিস্তারিত।
অন্যদিকে হ্যবেই প্রদেশের ছাংচৌয়ের বিস্তৃর্ণ নানতাকাং জলাভূমিতেও চলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাখির চলাফেরা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের কাজ।
সেই সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে রেকর্ড করা হচ্ছে জলচর পাখির ডাক। প্রযুক্তির মাধ্যমে সে ডাক শুনেই চেনা যাচ্ছে পাখির প্রজাতি।
নানতাকাং ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড বার্ড নেচার রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অফিসের কর্মী চাং চিনসিং জানালেন, ‘পাখির ডাক সংগ্রহ করা হয় দুটি নৌকার মতো দেখতে ভয়েসপ্রিন্ট সংগ্রাহক যন্ত্র এবং একটি খুঁটির মতো ডিভাইসের মাধ্যমে। রেকর্ড করা ডাকগুলো আমাদের এআই ডাটাবেসে সংরক্ষিত এক হাজার ৫৬৯টি প্রজাতির পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। এতে প্রজাতিটা শনাক্ত করতে পারি। আমরা ১ লাখ ৯০ হাজার পাখির শব্দের নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং এর মাধ্যমে ১৯৭টি প্রজাতি চিহ্নিত করেছি।’
জলচর প্রাণীর এ অভয়ারণ্যে রয়েছে ১১টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ভিডিও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। পাখি শনাক্ত করার পাশাপাশি সংখ্যাও গুনতে পারে এটি।
চাং চিনসিং আরও জানালেন, ‘এই ফুটেজে দেখা যাবে পাখিগুলো ফ্রেমবন্দি হচ্ছে, তাদের প্রজাতি এবং সংখ্যা উপরে দেখা যাচ্ছে। আমাদের এআই ডাটাবেসে পাখির ছবি পাঠানোর পর পাখিদের শনাক্ত করা হয়। এটি একটি বিশাল ডাটাবেস। এটি আমাদের মনিটরিং সিস্টেমের আওতা বাড়িয়ে দেয় এবং ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণের ত্রুটি কমাতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে, আমরা পাখিদের বিরক্ত না করেই পর্যবেক্ষণ করতে পারি।’
এদিকে শরৎ ও শীতের শুকনো মৌসুমে পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের পোয়াং হ্রদে বিস্তীর্ণ জলাভূমি তৈরি হয়। তখন এখানে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি।
এ জলাভূমিতে পাখি পর্যবেক্ষণে আছে একটি বুদ্ধিমান ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম।