মার্কিন ডলারের আধিপত্য: বিশৃঙ্খল বিশ্ব অর্থনীতির শিকড়
ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ২ নভেম্বর আবারও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে, ফেডারেল রিজার্ভ টানা ছয় বার সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে সুদের হার হয়েছে সর্বোচ্চ। মার্কিন সাবেক অর্থমন্ত্রী জন কনালি একবার বলেছিলেন, ‘ডলার আমাদের মুদ্রা, তোমাদের সমস্যা।’ যখন বিশ্ব অর্থনীতি করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষের নেতিবাচক ধাক্কা সামলাচ্ছে, তখন সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রীর কথা যেন আবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি হলে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পুঁজি আকৃষ্ট করবে, যা অন্যান্য দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাবে, ঋণ পরিষেবার খরচ বাড়াবে। যার ফলে কিছু দেশ এমনকি মুদ্রা বা ঋণ সংকটে পড়ে যাবে।
ডলারের আধিপত্য হল আর্থিক ক্ষেত্রে মার্কিন বিশ্ব আধিপত্যের প্রতিফলন এবং বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের জন্য সমর্থনও বটে। তাই নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চাইলে, যুক্তরাষ্ট্রকে ডলারের আধিপত্যও বজায় রাখতে হবে। যুদ্ধ, জবরদস্তি ও আর্থিক সংন্ত্রাসের মাধ্যমে ডলারের আধিপত্য বজায় রাখে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন, গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দ্রুত বেড়ে যায় এবং ইয়েনের আন্তর্জাতিকীকরণ এগিয়ে গেলে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এ ‘সমস্যা’ সমাধানে জাপানের মতো মিত্র দেশের ওপরও জবরদস্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাজ্য স্বাক্ষর করে প্লাজা চুক্তি। জাপানের রপ্তানির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জাপান দীর্ঘসময়ের অর্থনীতির মন্দাবস্থায় পড়ে যায়। ইয়েনের বিশ্বায়নও থমকে দাঁড়ায়। ১৯৯৯ সালে যখন ইইরো জন্ম নেয়, তখনও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও দমনের মুখে ছিল।