সহজ চীনা ভাষা: ড্রাগনের চোখ আঁকা
চীনের চান্দ্রপঞ্জিকায় প্রত্যেক যুগকে ১২টি প্রাণীর নামে চিহ্নিত করা হয়। আসন্ন চীনের নতুন বছর হল ড্রাগন বর্ষ। ড্রাগন চীনের একটি কাল্পনিক ও পৌরাণিক প্রাণী যা কালক্রমে চীনা জাতির টোটেম ও প্রতীকে পরিণত হয়েছে। পাশ্চাত্যের ড্রাগনের মত নয়, চীনা সংস্কৃতিতে ড্রাগনের আকার সাপের মত, গায়ে আঁশ আছে, মাথায় হরিণের মত সিং আছে, চোখ বাঘের চোখের মত, নাক সিংহের নাকের মত আর কান গরুর কানের মত। যা শক্তিশালী ও রহস্যময় প্রাণী, যা ক্ষমতা, শক্তি, মর্যাদা, মঙ্গল, সমৃদ্ধি, সৌভাগ্যের প্রতীক। ড্রাগন চীনা লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে আরাধনা করা হয়। চীনা ভাষায় ড্রাগন সম্পর্কিত শব্দ অনেক। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ড্রাগন সম্পর্কিত যে ছেং ইয়ু শেখাবো, তা হল ‘画龙点睛’, বা ‘ড্রাগনের চোখ আঁকা’।
এই গল্পে বলা হয়, নান পেই ছাও রাজবংশ আমলে একজন বিখ্যাত চিত্রকর ছিলেন। তার নাম চাং সেং ইয়াও। তার আঁকা ছবি খুব প্রাণবন্ত, মানুষ বেশ পছন্দ করত। ধনী ব্যবসায়ী ও রাজকীয় অভিজাতরা তার চিত্র কেনার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করত। একবার সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি নতুন নির্মিত একটি মন্দিরের জন্য ড্রাগনের ছবি আঁকেন। কিছু দিনের মধ্যে তিনি মন্দিরের দেয়ালে ৪টি প্রাণবন্ত ড্রাগন আঁকেন। এসব ড্রাগন এত প্রাণবন্ত যে দূর থেকে দেখে সত্যি ড্রাগন বলে মনে হয়। যা অনেক মানুষকে আকর্ষণ করে। তবে যখন কাছে যায় তখন মানুষরা আবিষ্কার করে যে, এসব ড্রাগনের চোখ নেই। সবাই খুব বিভ্রান্ত হয়, চাং সেং ইয়াওকে জিজ্ঞেস করে কেন ড্রাগনের চোখ আঁকেন না। তিনি জবাব দিয়ে বলেন: “চোখ আঁকা সহজ, কিন্তু চোখ আঁকলে ড্রাগন প্রাণ পাবে, উড়ে যাবে।” মানুষরা তার কথা শুনে হেসে উঠল। আঁকা ড্রাগন কিভাবে উড়ে যেতে পারে? সবাই মনে করে তিনি ঠাট্টা করছেন। সবার চাপে পড়ে চেং সেং ইয়াকে দুটি ড্রাগনের চোখ আঁকতে হয়। চোখ আঁকার পর এ দুটি ড্রাগন তার কথা মত প্রাণ পায় এবং দেয়াল ভেদ করে আকাশে উড়ে যায়। সবাই এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। এ থেকে এসেছে ছেং ইয়ু ‘画龙点睛’ বা ‘ড্রাগনের চোখ আঁকা’। পরে মানুষ এই শব্দটি দিয়ে ‘কথা বলা বা প্রবন্ধ লেখার সময় কিছু বাক্য দিয়ে মূল বিষয়কে হাইলাইট করে, কথা ও প্রবন্ধ আরো শক্তিশালী হওয়ার আচরণ’ বর্ণনা করে।