‘কিন্ডারগার্টেনের’ মতো বৃদ্ধাশ্রম
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর ফ্যান চিনলিন দুটি নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। নিজের অনুশীলনে তিনি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেন। একদিন, একজন বৃদ্ধা তাকে বলেছিলেন যে, তিনি ‘ই-গেম’ শিখতে ও খেলতে চান। তিনি তাকে যে, তার নাতি ই-গেম খেলতে পছন্দ করে। যদি তিনি নিজেই এটি শিখে ফেলেন, তাহলে নাতির ছুটির সময় তার সাথে খেলতে পারেন। সেই সময়ে ফ্যান চিনলিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সমস্ত বয়স্ক মানুষ স্কোয়ার ডান্স নাচ এবং থাই চি করতে পছন্দ করেন না। কিছু বয়স্ক মানুষ নিজেকে 'বৃদ্ধ শিশু' বলে মনে করেন, তারা ছোটদের জিনিস শিখতে ও খেলতে চান।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ফ্যান চিনলিন সেলফোন নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে একজোড়া বৃদ্ধার স্ল্যাপস্টিকের দৃশ্য শুটিং করে স্বল্প ভিডিও প্লাটফর্মে পোস্ট করেন। অপ্রত্যাশিতভাবে ভিডিওটি খুব ভাল সাড়া পায়। নেটিজেনরা একের পর এক কমেন্ট করতে থাকেন এবং বয়স্ক হওয়ার পর এমন একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ফ্যান চিনলিন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে অনেকেরই বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে কিছু পূর্বধারণা রয়েছে। তারা মনে করেন যে, বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশ নোংরা, অগোছালো, বিশৃঙ্খল, এমনকি বয়স্কদেরও সেখানে গালাগালিও দেওয়া হয়। আমি আশা করি যে, আমার ভিডিওর মাধ্যমে, সবাই বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে একটি ভালো ও প্রকৃত ধারণা পাবেন।’
তারপর ফ্যান চিনলিন বৃদ্ধাশ্রমের দৈনিক কার্যকলাপের ওপর সিরিজ ভিডিও তৈরি করেন এবং সেগুলো নিজের সংক্ষিপ্ত ভিডিও অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। বিপুলসংখ্যক ভক্তের দৃষ্টি সেদিকে আকৃষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্ট থেকে আয় হতে থাকে। ফ্যান চিনলিনের মনে তখন একটি নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়। তিনি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্লাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত আয় বয়স্কদের সেবায় কাজে লাগাতে শুরু করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যান চিনলিন তার পঞ্চম বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নেন। এই বৃদ্ধাশ্রমে সমস্ত বয়স্ক লোকদের বিনামূল্যে ভর্তি করা হয়। ফ্যান চিনলিন বৃদ্ধাশ্রমের দৈনন্দিন জীবন ভিডিও করে যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন এবং এ থেকে অর্জিত টাকা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের ব্যয় নির্বাহ করেন।
তাঁর বৃদ্ধাশ্রমে শুধুমাত্র আরামদায়ক পরিবেশই নেই, সাথে সাথে সেখানে ই-গেম খেলার রুম, ভিআর রুমসহ নানান রুম রয়েছে। ফলে এটি একটি ‘নেট সেলিব্রিটি’ বৃদ্ধালয়ে পরিণত হয়। ‘বৃদ্ধ শিশুরা’ এখানে যুবকদের বিনোদনমূলক কার্যকলাপ শিখেছেন, এমনকি ইন্টারনেট স্ল্যাং বলতেও শিখেছেন এবং এতে অনেক মজাও পাচ্ছেন। কিছু নেটিজেন রসিকতা করেন বলেন যে, ফ্যান চিনলিন বৃদ্ধাশ্রমকে একটি ‘কিন্ডারগার্টেনে’ পরিণত করেছেন।
‘সেলফ-মিডিয়া প্লাস বৃদ্ধাশ্রম’ মডেলের অপারেশনটিও অনেক সন্দেহের সম্মুখীন হয়। কিছু লোক মনে করেন যে, ফ্যান চিনলিন নিজের জন্য অর্থোপার্জনে বৃদ্ধদের ব্যবহার করছেন। ‘কীভাবে কিছু মানুষের এই ভুল ধারণা দূর করা যায়, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু আমি অটল থাকি। আমি আশা করি যে, এর মাধ্যমে আরও বয়স্ক লোক এটি দেখতে পাবেন, বিশেষ করে যাদের প্রকৃত প্রয়োজন আছে, তারা আমাদের সেবা সম্পর্কে জানতে পারবেন।’ ফ্যান চিনলিন আরও বলেন যে, তিনি এটিকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক করতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মিডিয়া ব্যক্তি এবং একজন পরিসেবাকারী হতে চাই, যিনি সত্যিই বয়স্কদের সেবা করার শিল্পকে প্রচার করতে পারেন, একজন ব্যবসায়ীর সাথে জড়িত ব্যক্তি নন।’
ফ্যান চিনলিনের বৃদ্ধাশ্রমের একটি স্লোগান আছে, আর তা হলো: বৃদ্ধরা যেখানে আছেন, সেখানেই তাদের বাড়ি। তার মতে, পেনশন শিল্প বা বয়স্কদের সেবা করা মানেই প্রবীণদের প্রয়োজন পূরণে কাজ করা। বয়স্করা বাড়িতে থাকতে বা বৃদ্ধাশ্রমে তাদের সমবয়সীদের সাথে থাকতে চান। অবশ্যই বয়স্কদের পছন্দকে সম্মান করতে হবে। ফ্যান চিনলিন মনে করেন, বৃদ্ধাশ্রম এমন একটি জায়গা, যেটি বয়স্কদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করতে পারে। বয়স্করা যেকোনো উপায় বেছে নিয়ে তাদের বার্ধক্য কাটাতে পারেন। এটাই বয়স্কদের সেবা করার অর্থ।