‘কিন্ডারগার্টেনের’ মতো বৃদ্ধাশ্রম
আপনাদের ধারণায় বৃদ্ধাশ্রম কীরকম হতে পারে? বিরক্তিকর ও প্রাণহীন? আপনারা কি আগে কখনও ‘কিন্ডারগার্টেনের’ মতো বৃদ্ধাশ্রমের কথা শুনেছেন? আজকের অনুষ্ঠানে চলুন সবাই মিলে ‘কিন্ডারগার্টেনের’ মতো একটি বৃদ্ধাশ্রমে ঘুরে বেড়াবো।
চীনের হ্যনান প্রদেশে এমন একটি বৃদ্ধাশ্রম আছে, যেখানে বৃদ্ধবৃদ্ধারা ই-স্পোর্টস খেলেন, সংক্ষিপ্ত ভিডিও শুটিং করেন এবং লাইভ সম্প্রচারও করেন। ফ্যান চিনলিন নামের একজন তরুণ এই বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার পরিচালিত এই বৃদ্ধাশ্রম সাধারণ বৃদ্ধাশ্রমসংক্রান্ত মানুষের ঐতিহ্যগত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে।
২৬ বছর বয়সী ফ্যান চিনলিন ইতোমধ্যেই ৫টি নার্সিং হোমের পরিচালক। তিনি শুধু বয়স্কদের ভালো যত্ন নেন না, বরং দাদা-দাদিদের অনেক মজাও দেন। তার বৃদ্ধাশ্রমে বাসরত বৃদ্ধবৃদ্ধারা ছোট ভিডিও তৈরি করতে, ই-স্পোর্টস খেলতে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শিখে ফেলেছেন। বয়স্ক হলেও, তাদের জীবন তরুণ-তরুণীদের মতো প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এখানে।
ফ্যান চিনলিন, হ্যনান প্রদেশের সুই ছাং শহরের বাসিন্দা। তার মাথায় বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠার চিন্তা আসে নিজের দাদীর অসুস্থতার অভিজ্ঞতা থেকে।
২০১৭ সালে, তার দাদি দুর্ঘটনাক্রমে বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন এবং হাড় ভাঙ্গা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার বাবা-মা কাজে ব্যস্ত ছিলেন, ফ্যান চিনলিন, যিনি তখন কলেজে ছিলেন, দাদীর যত্ন নিতে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যান। সেই সময় তিনি ভাবলেন যে, যদি একটি নার্সিং হোম বা বৃদ্ধাশ্রম খুলতে পারি এবং আমার দাদিকে সেখানে রাখতে পারি, তখন তার যত্নের অভাব হবে না।
ফ্যান চিনলিনের বাবা বয়স্কদের যত্ন নিতে অভ্যস্ত। তিনি হ্যনান প্রদেশে বয়স্কদের জন্য প্রথম সরকারি মালিকানাধীন বৃদ্ধাশ্রম পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব পান। তার বাবার প্রভাবে, ফ্যান চিনলিন নিজের বৃদ্ধাশ্রম খুলতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফ্যান চিনলিন নিজেই বয়স্কদের যত্ন নেওয়াসম্পর্কিত সার্টিফিকেট অর্জন করেন। তিনি একে একে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শদাতা, বয়স্ক যত্নকর্মী, নির্মাণ অগ্নিনির্বাপক, এবং বয়স্ক মূল্যায়নকারী হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে পড়াকালীন তিনি বাবার বৃদ্ধাশ্রমে একটি সময়ের জন্য ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেন। সেই সময়ে তিনি দেখতে পেলেন যে, ঐতিহ্যবাহী নার্সিং হোম বা বৃদ্ধাশ্রম তার নিজের কল্পিত নার্সিং হোম থেকে আলাদা। তিনি বলেন, ‘এটি সেই নার্সিং হোম ছিল না যা আমি তৈরি করতে চাই।’
তারপর ফ্যান চিনলিন চীনের বিভিন্ন জায়গার বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা শুরু করেন এবং ছোট ভিডিও তৈরি করে নিজের যোগাযোগ-মাধ্যমের আকাউন্টে পোস্ট করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘এতো বেশি বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শনের পর আমার বৃহত্তম অনুভূতি হলো যে, বয়স্কদের বস্তুগত জীবন উন্নতি হওয়ার পর তাদের আধ্যাত্মিক পরিষেবার চাহিদা আরও বেশি হবে। বিভিন্ন জায়গায় বৃদ্ধাশ্রমগুলো এই দিকে উন্নয়নের চেষ্টা করছে, কিন্তু মাঝেমাঝে বয়স্কদের প্রকৃত মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।’