চীনের পরিবেশ রক্ষা-বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ‘দারিদ্রমুক্ত দেশ-দুই: একটি গুপ্তধন’
২০২১ সালে শ্রেষ্ঠ ডোমেস্টিক তথ্যচিত্রের কথা বলতে গেলে ‘দারিদ্রমুক্ত দেশ’ নিঃসন্দেহে শীর্ষ ৩টিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ প্রামাণ্যচিত্রের উপস্থাপক হংকংয়ের অভিনেত্রী ছেন ব্য আর ওরফে জ্যানিস চান। এই প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কারণে ‘‘চীনকে মুগ্ধ করা ২০২১ সালের বার্ষিক ব্যক্তিত্ব’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
যখন ‘দারিদ্রমুক্ত দেশ’ প্রচারিত হচ্ছিলো, তখন অনেকে জিজ্ঞাস করেন, এ প্রামাণ্যচিত্রের সিরিজ পর্ব বের হবে কিনা? চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে ‘দারিদ্রমুক্ত দেশ-দুই: একটি গুপ্তধন’ দর্শকদের সামনে হাজির হয় এবং প্রথম সিরিজের মতো অসংখ্য দর্শকদের প্রশংসা ও সমাদর পেয়েছে।
এই মৌসুমের থিম চীনের পরিবেশগত পুনর্গঠনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। সম্পূর্ণ চিত্রগ্রহণের প্রক্রিয়া দারুণ কঠিন ছিল। পাঁচজনের ক্রু ৩ মাসের মধ্যে ১০টিরও বেশি প্রদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
এ তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আমরা দেশের সবুজ রূপান্তরের সংকল্প দেখতে পেয়েছি এবং জানতে পারি যে, বিভিন্ন অঞ্চলে এমন অনেক মানুষ আছেন- যারা নীরবে দূষণমুক্ত জল ও সবুজ পাহাড়কে রক্ষা করছেন।
‘দারিদ্রমুক্ত দেশ-দুই: একটি গুপ্তধন’ নামে তথ্যচিত্রের চিত্রগ্রহণের সময় ছেন ব্য আর শত শত তিব্বতি হরিণকে খ্যখ্যসিলি অঞ্চলের মাটিতে দৌড়াতে দেখেছিলেন। চোখে জল নিয়ে তিনি চিৎকার করে বলেছেন, ‘এই দৃশ্যটা খুবই হৃদয়স্পর্শী’।
ইয়াংজি নদীর উৎসে অবস্থিত ‘খ্যখ্যসিলি’ এর চীনা ভাষায় অর্থ ‘সুন্দরী মেয়ে’। এখানে উচ্চ উচ্চতা এবং কঠোর প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। এটি চীনের চারটি জনবসতিহীন অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং তিব্বতীয় হরিণগুলোর সর্বাধিক ঘনীভূত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি।
বিংশ শতাব্দীর ৮০’র দশকে উন্মত্ত চোরা শিকারি খ্যখ্যসিলিতে একটি বিপর্যয়কর আঘাত এনেছিল। চোরা শিকারিরা মাত্র দশ সেকেন্ডের মধ্যে একটি তিব্বতি হরিণের চামড়া ছাড়াতে পারতো। ফলে তিব্বতি অ্যান্টিলোপের সংখ্যা তখন দু’লাখেরও বেশি থেকে ২০ হাজারে কমে দাঁড়ায়।
তিব্বতি অ্যান্টিলোপ মালভূমির বাস্তুসংস্থানের সম্পূর্ণ খাদ্য শৃঙ্খলকে সমর্থন করে। যদি তিব্বতি অ্যান্টিলোপ অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে ভাল্লুক, নেকড়ে, ঈগল এমনকি কাকও তাদের খাদ্য উৎস হারাবে এবং মালভূমির পরিবেশগত ভারসাম্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্যচিত্রে ছেন ব্য আর খ্যখ্যসিলি’র রক্ষী ছিউপেইচাসি এবং বন পুলিশ পুছুওছাইরেনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তারা যমজ ভাই। তাদের চাচা সুওনানতাচিয়ে এবং বাবা চাবাতুওচিয়ে তিব্বতীয় হরিণ সুরক্ষায় পরিশ্রম করেছেন, তথা যার যার প্রাণও উৎসর্গ করেছেন।
১৯৯২ সালে সুওনাতাচিয়ে ছিংহাই প্রদেশের চিতুও জেলার পার্টি কমিটির ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে চীনের প্রথম অস্ত্রধারী অ্যান্টি-পোচিং স্কোয়াড নির্মিত হয়। দু’বছর পর একবার পাহাড় পাহারা অভিযানে সুওনাতাচিয়ে ১৮ জন শিকারির সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধ শুরু করে। বেশ কয়েকবার গুলি খেয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্দুকটি ধরে রাখার ভঙ্গি বজায় রাখেন তিনি।
বাবার আত্মত্যাগের কথা বলতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে চোখের জল চেপে ধরেন পুছুওছাইরেন। সুওনানতাচি’র কাহিনী প্রজাপতির প্রভাব সৃষ্টি করেছিল এবং আরও বেশি লোককে পাহারা দেওয়ার পদে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।