তিব্বতি ফটোগ্রাফার পাও ইয়োং ছিং
‘পুরষ্কার জেতার বিষয়ে আমাকে সত্যিই কী খুশি করে?’ পাও ইয়োংছিং সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি ক্যামেরা ব্যবহার করে বিশ্বকে আমার জন্মস্থান দেখিয়েছি এবং সেটি হলো বন্য প্রাণীদের আদি শহর ও স্বর্গ।’
অনেক বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফির কাজ থেকে আলাদা, পাও ইয়োংছিং-এর লেন্সে শক্তিশালীরা দুর্বলকে খাওয়ার আইন ছাড়াও, ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার সময় বন্যপ্রাণীরা বেশিরভাগই প্রাকৃতিক, মুক্ত এবং আরামদায়ক অবস্থায় থাকে।
তিনি সর্বদা বন্য প্রাণীদের সবচে প্রাণবন্ত অবস্থার ছবি তুলতে পারেন: তুষার চিতাবাঘ তাদের লেজ দিয়ে ঢেকে তাদের শাবকগুলোকে স্তন্যপান করায়, হোজেনগুলো একে অপরের সাথে খেলে, ফেরেটগুলো তাদের মুখে ছোট ছোট ফুল নিয়ে তুষার থেকে উঁকি দেয়... পাও ইয়োং ছিং-এর ক্যামেরার সামনে প্রাণীগুলোকে খুব স্বাভাবিক দেখায়। মনে হচ্ছিল তারা ফটোগ্রাফারের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে না।
তিনি যে কষ্ট করেছেন, সে বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাননি, শুধু বলেছেন যে, তিনি খুব ভাগ্যবান। বন্য প্রাণীদের বিরক্ত না করার জন্য তিনি তার ‘অস্তিত্বের প্রভাব’ দূর করার বিষয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছিলেন।
বন্যপ্রাণীদের সাথে আরও ধীরে ধীরে কাজ প্রয়োজন। প্রথমে তিনি তাদের কাছ থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে দাঁড়াতেন। প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর তিনি দশ মিটারের মতো এগিয়ে যান, যাতে বন্যপ্রাণীগুলো ধীরে ধীরে তার সঙ্গে পরিচিত হয়। তাদের কাছ থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকে। এভাবে ১-২ ঘণ্টা থাকার পর বাড়িতে ফিরে যান তিনি।
পরদিন তিনি আবার আগের দিনের জায়গায় এসে অব্যাহতভাবে প্রতি ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে সামনে দশ মিটারের মতো এগিয়ে যান। এভাবে কয়েকদিন পর বণ্যপ্রাণীগুলো তার উপস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এরপর তিনি ক্যামেরা দিয়ে তাদের ছবি তোলা শুরু করেন।
৫৫তম আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফির বার্ষিক প্রতিযোগিতায় যে ছবিটি পুরস্কার জয় করেছে- ছবির সেই মুহূর্ত ধারণ করতে তিনি প্রায় তিন মাস সময় দিয়েছেন।
একবার পাও ইয়োংছিং একজন পশুপালকের বাড়িতে যান এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে আড্ডা দেন। তিনি শিশুদের জিজ্ঞাস করেন যে, সম্প্রতি তারা কি ওটোকোলোবাস ম্যানুল (Otocolobus manul) দেখেছে কিনা। শিশুরা মনে করতো- এটা বিড়াল।
শিশুদের কথা শুনে পাও ইয়োংছিং বুঝতে পারেন, আমাদের সন্তানরা নিজেদের জন্মস্থানের প্রাণীগুলো চিনে না, তাহলে কীভাবে হবে? তখন থেকে তিনি স্থানীয় পশু-প্রাণীর ছবি তোলার চিন্তা করেন।