টানা ১২ বছর ধরে অন্ধদের জন্য চলচ্চিত্র বর্ণনা করা মেয়ে চু ইং
তিনি বলেন, এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে ভাগ্য লাগে। আমার দাদি ছোটবেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন। তার চোখে ছানি ছিল, যা তাকে আরও বেশি দেখার সমস্যায় ফেলেছিল। যখন তার বয়স ৭০ ও ৮০ বছর হয়, তখন তিনি দেখতে পেতেন না। তখন তিনি আমাদের নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতেন। তার সাথে আড্ডা দেওয়া, খবরের কাগজ পড়া এবং টিভির নানা ছবি নিয়ে কথা বলতাম। হয়তো এই কাজ- আমার দাদির প্রভাব থেকে, আমার হৃদয়ে এখনও এই ধরনের মানুষের প্রতি একটি বিশেষ অনুভূতি আছে।
তারপর থেকে চু ইং ফিল্মে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং মুভি ব্যাখ্যা করার কৌশলগুলো নিয়ে গবেষণা করে থাকেন।
সেই সময় আমি প্রথম যে মুভিটি ব্যাখ্যা করেছিলাম, তা হল চাং ইমৌয়ের পরিচালিত ‘অ্যালাইভ’। এই বিশেষ মুভিটি ভালোভাবে বলার জন্য আমি সত্যিই বিশ বা ত্রিশ বার দেখেছি। সম্পাদনা শিখতেও শুরু করেছিলাম আমি।
কেন আমি সম্পাদনা শিখতে শুরু করেছি? কারণ একটি সাধারণ সিনেমার মতো এর দৈর্ঘ্য বেশিরভাগই দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা, কিন্তু আমি খেয়াল করেছি যে, অন্ধ বন্ধুরা লম্বা দৈর্ঘ্যের দৃশ্যে সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারেন না। তাই আমি সিনেমার সারাংশ বোঝার চেষ্টা করতাম।
আমি যখন কথা বলছিলাম, কথার মাঝখানে আমাকে বিরতি দিতে হয়েছিল। কারণ আমার তাদের কাছে সিনেমার দৃশ্য বর্ণনা করা দরকার। আমি আঞ্চলিক ভাষায় তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পছন্দ করি।
প্রথমবার চলচ্চিত্র ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়া নিখুঁত না হলেও অন্ধ বন্ধুদের উত্সাহ তাকে চালিয়ে চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। চু ইং বলেন, প্রথমবার মঞ্চের নীচে শতাধিক অন্ধ মানুষের মুখোমুখি হয়ে আমি অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। আস্তে আস্তে আমি আবিষ্কার করি যে, চলচ্চিত্রের দৃশ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা কখনও কখনও ভ্রুকুটি করতো, কখনও কখনও তারা হাসতো, এবং আমি ভাবছিলাম যে, তারা এটি বুঝতে পেরেছিলেন এবং সিনেমার দৃশ্যের সাথে অনুরণিত হয়েছিলেন। মুভি শেষ হওয়ার পর চাং নামের এক খালা উত্তেজিত হয়ে আমার কাছে আসেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি সত্যিই এটি দেখেছি। তখন আমার মনে হল, উনি বেশ শিশুর মত উত্তেজিত।