বাংলা

লুও দাদা এবং তাঁর চিড়িয়াখানা

cmgPublished: 2022-06-09 17:25:06
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

লুও চেন জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত এবং খুব তাড়াতাড়ি স্কুল ছেড়ে দেন। তিনি চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি করতে সাহায্য করতেন। রোগ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে ওঠে এবং ২০০৮ সালে মারা যান।

লুও চেন মারা যাওয়ার আগে বাবাকে বললেন, ‘আমি আর আপনাকে সঙ্গ দিতে পারব না, বাবা, চিড়িয়াখানা ভালোভাবে পরিচালনা করুন।’

লুও চেনের মৃত্যুর আট বছর পর লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি দেউলিয়া হওয়ার পথে চলে যায়।

আসলে প্রতিষ্ঠার প্রথম কয়েক বছরে হুবেই প্রদেশের এনশিতে প্রথম চিড়িয়াখানা হিসেবে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানা একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল।

সেই সময়ে টিকিটের মূল্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্ট এবং বার্ষিক আয় দশ হাজার ইউয়ানের কিছু বেশি। ‘ফোংহুয়াং শান বা ফিনিক্স মাউন্টেন চিড়িয়াখানা’ বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় তা ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে এনশির উন্নত পরিবেশসহ আরও আধুনিক চিড়িয়াখানা দেখা দেয় এবং সেখানে কিছু প্রাণীর পারফরম্যান্সও আছে। বিপরীতে, লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি কিছুটা পুরানো দেখায়।

একদিকে পর্যাপ্ত প্রজাতির প্রাণী নেই, অন্যদিকে আধুনিক মল নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চিড়িয়াখানাটি অন্য আধুনিক চিড়িয়াখানার চেয়ে একটু দুর্গন্ধযুক্ত হয়। কখনও কখনও পর্যটকরা লুও দাদা’র সামনে চিড়িয়াখানার সমালোচনা করত বা এমনকি তাকে অপমান করত, কিন্তু লুও দাদা শুধু হাসতেন।

পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য ২০১৬ সালে লুও দাদা চিড়িয়াখানার টিকিট ২০ ইউয়ান থেকে কমিয়ে ১০ ইউয়ান করেন, কিন্তু অনেক সময় তিনি দিনে একটি টিকিটও বিক্রি করতে পারতেন না।

তিনি পশুদের অভিনয় করতে দিতে রাজি হন নি। তার কাছে পশুরা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার নয়। এটি হল তার বটম লাইন এবং এই সিদ্ধান্তে তিনি অটল আছেন।

পর্যটক থাকুক বা না-থাকুক,প্রাণীদের প্রতিদিন খেতে দিতে হয়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিড়িয়াখানাটিতে শুধুমাত্র খাদ্যের জন্য ৪০ লাখেরও বেশি ইউয়ান ব্যয় করা হয়েছে। শীতকালে যেসব প্রাণী ঠান্ডায় ভয় পায়, তাদের লাইট দিয়ে গরম রাখতে হয়, বিদ্যুৎ খরচও অনেক বেশি হয়।

লুও দাদা’র মাসিক পেনশন হল ৫ হাজার ইউয়ান, কিন্তু এই অর্থ দিয়ে চিড়িয়াখানা পরিচালনা করা যায় না। লুও দাদা ক্রমাগত আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করেন এবং এমনকি কিছু স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করেন।

২০২০ সালে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর লুও দাদা’র অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

লুও দাদা’র ছেলে লুও বিন একাধিক বার বাবাকে বলেন যে, চিড়িয়াখানা তিনি আর পরিচালনা করবেন না এবং ভালোভাবে অবসর জীবন উপভোগ করুন। ছেলের প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন লুও দাদা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি মিডিয়ার উদ্যোগে ক্রমাগত রিপোর্ট করেছে এবং কিছু ব্যক্তিগত অনুদানও আকৃষ্ট করেছে। তবে, চিড়িয়াখানার সামগ্রিক কার্যক্রম এখনও আশাব্যঞ্জক নয়।

এই বছরের জানুয়ারিতে, লুও দাদা’র নাতনি লুও ওয়েই দাদার জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।

লুও ওয়েইয়ের এখন ২২ বছর বয়স। জন্মের পর থেকে চিড়িয়াখানার পিছনের বাড়িতে তার পরিবারের সাথে বাস করে আসছিল। তার কাছে চিড়িয়াখানাও তার বাড়ি।

লুও ওয়েই শৈশব থেকেই তার পরিবারে কালো ভাল্লুক, বাঘ এবং অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর সাথে থাকতে অভ্যস্ত হয়েছে। সে যখন তাদের নাম ধরে ডাকে, তখন তারা সাড়া দেয়।

চিড়িয়াখানায় একটি ছোট কালো কুকুরও ছিলো। লুও ওয়েইয়ের মনে পড়ে যে, সে যখন প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেত, তখন সেটি তাকে অনুসরণ করত। বিকেলে স্কুল শেষে ছোট্ট কালো কুকুরটি আগে থেকেই স্কুলের গেটে তার জন্য অপেক্ষা করত, বৃষ্টিতে বা সূর্যের আলোয়। কয়েক বছর পর ছোট্ট কালো কুকুরটি মারা যায় এবং লুও ওয়েই দীর্ঘ সময় গভীর দুঃখে পড়ে।

উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার পর লুও ওয়েই চিড়িয়াখানায় কম সময় দিতো। কিন্তু যখনই সে ছুটি কাটাতে বাড়ি আসত, চিড়িয়াখানার বিড়াল ও কুকুররা লেজ দুলিয়ে তাকে বাড়িতে স্বাগত জানাতো এবং খাঁচায় থাকা প্রাণীরাও তাকে চিনত।

এই ছোট্ট চিড়িয়াখানায় লুও ওয়েই এবং তার দাদা একসঙ্গে অসংখ্য দিন-রাত কাটিয়েছে।

লুও ওয়েই প্রায়শই তার দাদা ও প্রাণীদের মধ্যে সম্পর্ক দেখে অবাক হয়ে যায়।

একদিন দাদা- যে অজগরটিকে কবর দিয়েছিলেন- সেটি প্রথমে ছোট সাপ ছিল। একদিন, লুও ওয়েই দেখতে পেল যে, সে দাদা’র কথা বুঝতে পারে। যখন দাদা ডাকলেন, তখন সেই সাপ একটি বাধ্য কুকুরছানার মতো দাদার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়।

মাঝেমাঝে লুও ওয়েই দাদা’র জন্য কিছু ছোট প্রাণীর যত্ন নিতেন, বাসা তৈরি করতেন এবং তাদের খাওয়াতে সাহায্য করতেন। দাদা তাকে বিভিন্ন প্রাণীর অভ্যাস এবং কীভাবে আঘাত মোকাবিলা করতে হয়- তা শিখিয়েছিলেন।

ছোটবেলায় দাদার সাথে লুও ওয়েই’র স্মৃতিগুলোর কারণে দাদা কী করেছিলেন তা গভীরভাবে বুঝতে পারতেন।

এটি শুধুমাত্র একটি চিড়িয়াখানা নয়, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রাণীরা আরও ভালভাবে বসবাস করতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক হলেও লুও ওয়েই কখনও অন্য চিড়িয়াখানায় যায়নি। একবার তিনি অ্যাকোয়ারিয়ামে গিয়েছিলেন, তিনি পশুদের পারফরমেন্সের আগে বের হয়ে যান। তিনি বলেন, এটি দেখার সাহস আমার নেই, পারফরমেন্স প্রাণীদের জন্য খুব কষ্টকর।

পরে, যখন চিড়িয়াখানাটি অর্থকষ্টে পড়ে এবং যখন পরিবারের সবাই দাদাকে এই কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, তখন শুধু লুও ওয়েই তার দাদাকে বুঝতে পারে। লুও ওয়েই বলেন, তিনিই খুবই দয়ালু ব্যক্তি।

বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা তাদের মন পরিবর্তন করেন এবং দাদার কাজে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লুও ওয়েইয়ের কাছে একমাত্র দুঃখজনক বিষয় হলো- ইন্টারনেটে দাদার সমালোচনা।

কিছু লোক বুঝতে পারে না, কেন প্রাণীদের লক করে রাখা হয়েছে। তারা জানতেন না যে, এগুলো আহত প্রাণী এবং যদি তাদের বনে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভালভাবে বাঁচতে পারবে না।

এসব লোকের জবাব দিতে এই বছরের জানুয়ারিতে লুও ওয়েই চিড়িয়াখানার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যাতে আরো বেশি লোক চিড়িয়াখানাটি আরও ভালোভাবে দেখতে পারে এবং দাদা’র গল্প জানতে পারে। এই অ্যাকাউন্টের নাম হলো ‘লুও দাদা’র চিড়িয়াখানা’।

অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিওগুলো দেখার পরে অনেক তরুণ নেটিজেন বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে চিড়িয়াখানাকে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

কিছু লোক অনলাইনে কিছু কুকুর ও বিড়ালের খাবার কিনে লুও দাদাকে পাঠায়, আর কিছু লোক সমর্থন দেওয়ার জন্য অন্য জায়গা থেকে এসে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানায় ঘুরে বেড়ান।

যাই হোক, যখন কিছু নেটিজেন চিড়িয়াখানায় অনুদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে, তখন লুও দাদা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি মনে করেন, মহামারীর সময় সবার জন্য কঠিন, আগে নিজের যত্ন নিতে হবে।

বন্ধুরা, কখনও সুযোগ পেলে হুবেই প্রদেশের এনশি শহরে গেলে অবশ্যই লুও দাদা’র চিড়িয়াখানায় যাবেন।

লিলি/তৌহিদ/শুয়ে

首页上一页123 3

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn