বাংলা

লুও দাদা এবং তাঁর চিড়িয়াখানা

cmgPublished: 2022-06-09 17:25:06
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মাঝেমাঝে লুও দাদা কিছু হিংস্র জন্তু গ্রহণ করেন।

২০০৩ সালে লুও দাদা একটি সাইবেরিয়ান বাঘ দত্তক নেন। ছোটবেলায় সেই বাঘের লেজে কামড় পড়েছিল।

২০০৪ সালে, একটি রেস্টুরেন্ট গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার বিনিময়ে একটি কালো ভাল্লুক উদ্ধার করেছিলেন। লুও দাদা তার পকেটে থাকা তিন হাজার ইউয়ান দিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছ থেকে কালো ভালুকটি কিনে নেন এবং এর নাম রাখেন ‘কুয়েকুয়ে’, এর অর্থ হলো ‘ডিয়ার’।

যখন এসব প্রাণী প্রথম দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তখনও চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠেনি। সেই সময়ে লুও দাদা একটি সিনেমার থিয়েটারে কাজ করতেন এবং যতবার তিনি একটি পশু দত্তক নিতেন, তিনি এটিকে তার কুঁড়েঘরে রাখতেন।

পরে কুঁড়েঘরে তিতির, থ্রাশ ও অন্যান্য প্রাণীর ভিড় ছিল এবং লুও দাদা বাচ্চাদের নিয়ে করিডোরে শুয়ে থাকতেন।

১৯৮৯ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার লুও দাদাকে ২০ হাজার ইউয়ান ভর্তুকি দিয়ে একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করে দেয় এবং এভাবে সরকারি সহায়তায় একটি বেসরকারি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

চিড়িয়াখানাটি হুবেই প্রদেশের এনশি’র ফোংহুয়াং পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত।

খুব খাড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে গেলে আপনি একটি বড় লোহার গেট দেখতে পাবেন, যার পিছনে একটি টেবিল রয়েছে, যা চিড়িয়াখানার টিকিট অফিস। চিড়িয়াখানাটি খুব বড় নয়। প্রায় পাঁচশ’ বর্গমিটার মাত্র। চিরিয়াখানায় কালো ভাল্লুক, শেয়াল, বানর, ময়ূর এবং ২০ টিরও বেশি কুকুরসহ ৩০টিরও বেশি প্রাণী রয়েছে।

লুও দাদা চিড়িয়াখানার পরিচালক, সেইসাথে একজন ব্রিডার, কন্ডাক্টর, ক্লিনার, পশুচিকিত্সক এবং শোক পালনকারী।

প্রতিদিন সকালে তিনি তার সাইকেল নিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে সবজির বাজারে পশুর জন্য খাবার কিনতে যান। প্রাণীরা প্রধানত নিরামিষ, তবে কিছু মাংসাশী প্রাণীদের অবশ্যই মাংস খেতে দিতে হবে। তাই তাকে কিছু লিভার, হার্ট ও মাছ কিনতে হয়।

বাজারের লোকেরা যারা তার সাথে পুরানো বন্ধু, তারা দাদার কাছে সস্তা দামে খাবার বিক্রি করেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত সবজির পাতা দেন। তারপরও তাঁকে প্রতিদিন কমপক্ষে চার/পাঁচশ ইউয়ান খাবার কিনতে হয়।

চিড়িয়াখানার অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য লুও দাদা খুব কঠোর জীবনযাপন করে থাকেন। তার মাসিক পেনশনের ৬৫ শতাংশেরও বেশি পশুদের পেছনে ব্যয় করতে হয়।

চিড়িয়াখানা হলো লুও দাদা’র জীবনের প্রিয় কাজ।

প্রতিদিন ভোর চার-পাঁচটার মধ্যে উঠে তিনি মাটিতে পড়ে থাকা পাতাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করেন, তারপর খাঁচা পরিষ্কার করেন। সকাল ছয়টা বা সাতটার দিকে খাবার কিনতে বের হন। চিড়িয়াখানাটি সকাল দশটায় খোলে এবং রাতের অন্ধকার হলে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পর তিনি পশুদের খাওয়াতে শুরু করেন এবং বাগান পরিষ্কার করেন। রাত ১২টার পর তিনি ঘুমান। এভাবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়ম মেনে চলছেন তিনি।

একবার লুও দাদা তার চুল কাটলেন এবং দেখলেন যে, চিড়িয়াখানার বানররা তাকে এড়িয়ে চলছে। তারপর থেকে তিনি তার চুল ছোট করা বন্ধ করে দেন, কারণ প্রাণীদের সঙ্গে তার মানসিক দূরত্ব তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান এবং তার নাতির পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন নি, কারণ তাকে চিড়িয়াখানার সবকিছুর যত্ন নিতে হয়েছিলো। এমনকি তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুর অনুষ্ঠানেও যান নি। তবে চিরিয়াখানার পশু-পাখির ছোট-বড় কোনো বিষয়ে তিনি কখনোই অনুপস্থিত থাকেন না।

একবার কেউ একজন অসুস্থ সিভেটকে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়েছিল। লুও দাদা দেখতে পেলেন যে, এটি পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছে না, তাই পরের দিন সকালে তাকে খাওয়ানোর জন্য কেঁচো খনন করতে তিনি পাহাড়ে ওঠেন। ‘যতক্ষণ আমি এখানে আছি, আমি তাদের সেই নির্যাতন ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না।’

শেষ পর্যন্ত, সিভেট টিকে থাকতে পারেনি এবং লুও দাদা তাকে কবর দেওয়ার জন্য ফিনিক্স পর্বতে যান।

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাঘ, সিংহ, কুমির এবং আরও অনেক কিছুসহ ৪০টিরও বেশি মৃত প্রাণীকে কবর দিয়েছেন।

নাতনীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই অক্ষম ও অসুস্থ প্রাণীদের প্রতি লুও দাদা’র ভালবাসা সম্ভবত তার মেয়ে লুও চেনের সঙ্গে কিছু সম্পর্ক থাকতে পারে।

首页上一页123全文 3 下一页

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn