‘চীনকে মুগ্ধ করা বার্ষিক মানুষের তালিকায়’ নির্বাচিত হলেন হংকংয়ের অভিনেত্রী ও উপস্থাপক ছেন ব্য আর
জিজ্ঞাসাবাদের পর সেই গ্রামীণ চিকিত্সক ছেন ব্য আরকে জানান যে, শুধুমাত্র একটি প্রতিশ্রুতির কারণে তিনি এখানে জোর করে টিকে আছেন। কয়েক দশক আগে গ্রামের একজন প্রবীণ চিকিৎসক তাকে সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনেন।
পুরানো গ্রামীণ চিকিত্সক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি মানুষকে সুস্থ করে তুলতে এবং বাঁচিয়ে রাখতে এখানে থাকতে ইচ্ছুক কিনা।
তিনি গম্ভীরভাবে মাথা নাড়লেন। ৩৭ বছরে তার চারপাশে কিছু চিকিত্সক এসেছিলেন এবং চলেও গেছেন। শেষ পর্যন্ত, তিনিই অবিচল ছিলেন।
২০১৬ সালে ‘জিপলাইন টু ব্রিজ’ প্রকল্পটি চালু করা হয় এবং নদী জুড়ে ১৯৯টি সেতু সমস্ত জিপলাইন প্রতিস্থাপন করে। প্রায় এক শতাব্দী ধরে গ্রামবাসীদের বড় একটি সমস্যা অবশেষে সমাধান হয়। এরপর থেকে গ্রামবাসীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। সেই গ্রামীণ চিকিত্সক এই সেতুর মাধ্যমে আরো ভালোভাবে এবং আরও নিরাপদে গ্রামবাসীদের চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
দারিদ্র্যবিমোচন ডকুমেন্টারির বেশিরভাগ অংশে আমরা কেবলমাত্র ম্যাক্রো-লেভেল ইঞ্জিনিয়ারিং রূপান্তর এবং নীতি বাস্তবায়ন দেখতে পারি। কিন্তু এই গ্রামীণ চিকিত্সকের মতো একজন জীবিত ব্যক্তি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
ছেন ব্য আরের নির্মিত এই টিভি অনুষ্ঠানের কারণেই আমরা দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্প থেকে স্থানীয় জনগণের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন দেখতে পেরেছি। ছেন ব্য আর তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় জীবনের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
সমতাসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং খাঁটি মনোভাব নিয়ে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য থেকে পরিত্রাণের প্রচেষ্টা ও সুনির্দিষ্ট ফলাফল রেকর্ড করেছেন তিনি।
তার এই টিভি অনুষ্ঠান মূল ভূখণ্ডের দর্শকদের প্রশংসার পাশাপাশি, হংকংবাসীদের সমাদরও পেয়েছে।
‘No Poverty Land’ নামে টিভি অনুষ্ঠান ছাড়া, ছেন ব্য আরয়ের আরো উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম আছে।
‘No Poverty Land’ নামে টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের আগে তিনি ‘Faraway Brides’ নামে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন।
এ প্রামাণ্যচিত্রের মোট তিনটি সিজন আছে। এই প্রামাণ্যচিত্রে এমন হংকংয়ের নারীদের খুঁজে বের করা যায়, যারা দূরদূরান্তে বিয়ে করেছেন, তাদের জীবনযাত্রার অবস্থা এবং বিবাহ সম্পর্কে মতামত জানা হলো প্রামাণ্যচিত্রের লক্ষ্য।
তিনি ও তার ক্রু দরিদ্র নাইজেরিয়াতে গিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের সময় মিশরে পা রেখেছিলেন। এসব জায়গার সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ছিল, প্রায়ই হত্যার মতো ঘটনা ঘটত এবং এশিয়ানরা ছিল প্রধান লক্ষ্য।
প্রামাণ্যচিত্রের ক্রুদের বিমানবন্দরে ৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। অবতরণের পরও তাদের জীবন রক্ষায় স্থানীয় পুলিশকে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। বলা যায়, অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধের সংবাদদাতা হঠে ওঠেন।
‘Faraway Brides’ নামে দ্বিতীয় সিজন চিত্রগ্রহণের সময় তিনি তার জীবনের একটি নিম্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন তিনি।
একদিকে তিনি হংকংয়ের মহিলাদের তাদের রোমান্টিক প্রেমের গল্প বলতে শুনেছেন। কেউ কেউ তাদের উচ্চ বেতন ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে বিদেশে চলে যায়, কেউ কেউ তাদের আত্মীয়দের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রেমের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন।
তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, সত্যিকারের ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী হয়। অন্যদিকে তিনি গোপনে নিজের বিবাহবিচ্ছেদের তিক্ততা লুকিয়ে রাখেন।
‘Faraway Brides’ নামে প্রামাণ্যচিত্র শুধুমাত্র নিজের বিয়ের অভিজ্ঞতাই নয়, বরং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সামাজিক প্রতিফলন জাগিয়ে তুলেছে। যেমন ধরুন, সেরেনা নামে হংকংয়ের এক মেয়ের নাইজেরিয়ার সিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা একে অপরকে ভালোবাসে। তারা দু’জন হংকংয়ে বাস করতেন। তাদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে। জীবন সুন্দর ও স্থিতিশীল ছিলো। যেহেতু স্বামী কৃষ্ণাঙ্গ, তাই হংকংয়ে মাঝেমাঝে বৈষম্য সহ্য করতে হয় তাদের। তাই সেরেনা স্বামীর সঙ্গে হংকং থেকে নাইজেরিয়ায় চলে যান। ক্যামেরার সামনে সেরেনা জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেন। এখনকার জীবন সত্যিই কষ্টকর। অর্থনীতি অনুন্নত এবং অবকাঠামোও পশ্চাত্পদ। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তার অবস্থাও উদ্বেগজনক।
হংকংয়ের আরেকটি মেয়ে স্বামীর সঙ্গে বেলজিয়ামে চলে যান। কারণ তারা ৫টি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। হংকংয়ে এতগুলো শিশু লালন পালনের খরচ অনেক বেশি। বেলজিয়ামে শিশুদের লালন পালনে সরকারের বিশাল ভর্তুকি আছে।
আসলে হংকংয়ের বেশিরভাগ মেয়ে জন্মস্থান ছেড়ে যেতে চান না, তবে তাদের ছেড়ে যাওয়ার পেছনে উপযুক্ত কারণ আছে এবং ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না।
বিবাহ ও দারিদ্র্যবিমোচন ছাড়াও, ছেন ব্য আর ‘স্ট্যান্ড আপ উইথ লাভ’ নামে আরেকটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। এতে হংকং এবং সংশ্লিষ্ট কল্যাণ সংস্থায় বাস করা প্রতিবন্ধী শিশুদের উপর ফোকাস করা হয়েছে।