‘চীনকে মুগ্ধ করা বার্ষিক মানুষের তালিকায়’ নির্বাচিত হলেন হংকংয়ের অভিনেত্রী ও উপস্থাপক ছেন ব্য আর
গত ৩ মার্চ মাসে ‘চীনকে মুগ্ধ করা ২০২১ সালের বার্ষিক মানুষের’ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের মধ্যে একজন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনিই ছেন ব্য আর বা জ্যানিস চান।
অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর অভিনীত টিভি নাটক খুব কম এবং তিনি শুধুমাত্র কয়েকটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
তবে একজন উপস্থাপক হিসেবে তিনি বেশ সফল হয়েছেন। গত বছর তিনি ও তার দল ‘No Poverty Land’ শিরোনামে দারুণ প্রশংসামূলক একটি টিভি অনুষ্ঠান তৈরি করেন।
এই অনুষ্ঠানটি ছিল তার ‘চীনকে মুগ্ধ করা ২০২১ সালের বার্ষিক মানুষ’ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার প্রধান কারণ।
চীনের মুলভূভাগের অধিকাংশ দর্শকের কাছে ছেন ব্য আর-এর নাম কিছুটা অপরিচিত। তাই অনেকে ভাবছিলেন যে, বিনোদনকর্মী কীভাবে বিজ্ঞানী, মহাকাশচারী অথবা খেলোয়াড়দের সঙ্গে পুরস্কার লাভ করতে পারে?
আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ছেন ব্য আর-এর গল্প বলবো।
ছেন ব্য আর ১৯৭৯ সালের ১৪ জুন হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভ্যাঙ্কুভারে বড় হন। তাঁর বাবা হংকংয়ের সংগীত অঙ্গনের বিখ্যাত প্রযোজক।
এই পরিবারে বড় হওয়া ছেন ব্য আর বিনোদন অঙ্গনের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে তিনি হংকংয়ের প্রথম প্রজন্মের বিনোদন সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান।
তিনি বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা বুঝতে ও বলতে পারেন এবং অস্কার ও কান চলচ্চিত্র উত্সবসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন।
মাইকেল জ্যাকসন, জ্যাকি চান, লিওনার্দো ডিকাপ্রিও, কিমুরা টাকুয়াসহ বেশ কয়েকজন মহাতারকার সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তিনি।
তবে ছেন ব্য আর নিজেকে বিনোদন অঙ্গনে সীমাবদ্ধ রাখতে চান নি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরো গভীর কিছু বিষয়ে কাজ করা শুরু করেন।
গত বছরে তাঁর নির্মিত ‘No Poverty Land’ নামে টিভি অনুষ্ঠান হলো এবারে তাঁর পুরস্কার পাওয়ার প্রধান কারণ।
প্রোগ্রাম গ্রুপ তিন মাসে চীনের মুলভূভাগের ৬টি প্রদেশের ১৪টি দরিদ্র অঞ্চলে যায়। হংকংয়ের কয়েকজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নিজস্ব অনুশীলন এবং আন্তরিক হৃদয় দিয়ে সত্যিকারভাবে সারাদেশে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রক্রিয়া রেকর্ড করেছিলেন।
ধনী পরিবারে বড় হয়েছেন ছেন ব্য আর। এর আগে ‘দারিদ্র্যতা’ প্রসঙ্গে তার কোনো ধারণা ছিলো না। একটি অভিমানী দৃষ্টিকোণ এড়াতে তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন। আর সীমিত তহবিলের কারণে তাঁর দলে আছে মাত্র ৫জন। তিনি ক্যামেরা ধরে রেখে অধিকাংশ শট সম্পন্ন করেন।
শুটিং করার প্রক্রিয়ায় ৪২ বছর বয়সী ছেন ব্য আর খুব পরিশ্রম করেছিলেন। নু চিয়াং নদীতে জিপলাইনের বিপদ অনুভব করার জন্য যদিও তিনি নিজে চেষ্টা করেন। তবুও এক হাতে ফাঁকা স্থানে সেলফি স্টিক ধরে রাখছিলেন। ভয়ে তিনি কাঁপছিলেন।
তা ছাড়া, তিনি দুবার ‘ক্লিফে’ অবস্থিত এক গ্রামে যান। সেই গ্রামের আসল নাম হলো আথুলিয়েআর গ্রাম। যা সিছুয়ান প্রদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৪০০ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। তিনি উচ্চতার ভয় কাটিয়ে উঠতে বাধ্য হন।
তিব্বতে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে তিনি উচ্চতা-বিরোধী ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। অবশেষে উচ্চতার কারণে তিনি অসুস্থ হন এবং তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
যেহেতু দরিদ্র অঞ্চলগুলো গভীর বনভূমি ও প্রান্তরে অবস্থিত, সেখানে বাস করা জনগণের জীবন অনেক কষ্টকর। শুটিং করার সময় চাষ করা, শিকার এবং রান্না করাসহ নানা কাজ শিখতে শুরু করেন। তিনি হালকা আড্ডা দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব কমিয়েছেন। তিনি সবচে সহজ সরল উপায়ে দরিদ্র অঞ্চলের এক একটি মনোমুগ্ধকর কাহিনী সংগ্রহ করেছেন।
নু চিয়াং নদী প্রবাহিত অঞ্চলে তিনি ৫৭ বছর বয়সী একজন গ্রামীণ চিকিত্সকের সঙ্গে দেখা করেন। তার কাজ হলো নু চিয়াং নদীর দু’তীরে যাতায়াত করা গ্রামবাসীদের চিকিত্সা সেবা দেওয়া।
অতীতে স্থানীয়দের নদী পার হওয়ার প্রধান হাতিয়ার ছিল জিপলাইন। ভুলবশত ব্যবহার করা হলে, নদীতে পড়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল এবং কোন দেহাবশেষ অবশিষ্ট থাকতো না।
সেই গ্রামীণ চিকিত্সক ভীত নন এবং কয়েক দশক ধরে জিপলাইন দিয়ে নু চিয়াং নদীর দুই পাড়ে যাতায়াত করেছেন। সৌভাগ্যবশত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তবে তার সারা শরীরে অসংখ্য ছোট বড় দাগ ও ক্ষত ছিল।