বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, একটি প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার জনমতের দাবি অনুযায়ী চলমান শিক্ষাক্রম পরিবর্তন ও সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতে যেন উজ্জ্বল হয় সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। মূলত, পরিমার্জন ও সংস্কারের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমকে ভিত্তি ধরার চিন্তা করা হচ্ছে, যা মূলত ১৯৯৬ সালের শিক্ষাক্রমের অনুসরণে তৈরি করা হয়েছিল। যুগ যুগ আগের শিক্ষাক্রম এখন কতটা যুগোপযোগী সে প্রশ্নও উঠেছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাকাঠামো ছিল অনেকটাই অস্থিতিশীল ও অগোছালো। দীর্ঘদিনের পাকিস্তানি শাসনামলে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে অবহেলা, বৈষম্য ও উন্নয়নহীনতা বিরাজ করছিল। স্বাধীনতার পর এই খাতের মূল সমস্যাগুলি ছিল—অপর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মানসম্মত শিক্ষকের অভাব এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ঘাটতি। অর্থনৈতিক সমস্যাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে স্বাধীনতার পরপরই দেশে শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।
১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান সামরিক শাসনের অবসান ঘটায় এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক, মানবাধিকার ও সুশাসনভিত্তিক সমাজ গঠনের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছিল।
কিন্তু, ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, চাহিদা একেবারেই ভিন্ন। এই অভ্যুত্থান সর্বব্যাপী সংস্কারের দাবি নিয়ে জেগে উঠেছে। যা এক কথায় গভীর অর্থবোধক ‘রাষ্ট্র- সংস্কার’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত চাহিদা হলো- একটি সম-অধিকারের সমাজ, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে।