প্যারালিম্পিক গেমস ক্রীড়াবিদের অদম্য চেতনার সাক্ষী
প্যারিস প্যারালিম্পিক গেমস শুরু হতে চলেছে। ক্রীড়াবিদরা নিজদেরকে অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড ও কিংবদন্তিদের কাতারে নাম লেখাতে চেষ্টা করবেন। বিশ্বের বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে প্যারালিম্পিক গেমস যেন একটি অনন্য ও চকচকে মুক্তার মত, অধ্যবসায় ও আত্ম-উন্নতির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্যারালিম্পিক গেমসের ইতিহাস হল সাহস ও সংগ্রামের ইতিহাস, ব্রিটেনের ম্যান্ডেভিল থেকে ফ্রান্সের প্যারিস পর্যন্ত অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ ক্রীড়ার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে, ক্রীড়ার মানবিক চেতনার উজ্জ্বলতা তৈরি করেছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের ম্যান্ডেভিল হাসপাতালের কাছে নিম্নাংশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ১৬ জন রোগী হুইলচেয়ারে বসে তীর ধনুক ছাড়িয়েছে। ওটা ছিল ‘অক্ষম ক্রীড়ার জনক’ নামে লু গুটম্যান আয়োজিত একটি তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত সেনাদের চিকিত্সার জন্য তিনি ম্যান্ডেভিল হাসপাতালে স্পাইনাল কর্ড বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন, আর তার একটি বিশেষ ব্যক্তিগত আদর্শ আছে, যা সেই সময়ে খুব অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল— শুধুমাত্র আহতদের আরামদায়কভাবে তাদের অবশিষ্ট সময় কাটাতে দেওয়া নয়, বরং তাদের মর্যাদার সাথে আরও বেশি দিন বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা।
সেসব রোগীদের সক্রিয়ভাবে সুস্থ করে তোলার জন্য গুটম্যান তাদেরকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উত্সাহিত করেন। যা ধীরে ধীরে স্টাক ম্যান্ডেভিল গেমস গঠন করে, যা প্যারালিম্পিক গেমসের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৬০ সালে গুটম্যান প্রতিষ্ঠিত সেই প্রতিযোগিতা প্রথমবারের মত ম্যান্ডেভিল থেকে ইতালির রোমে আসে, সেখানে ২৩টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৪০০ জন প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রতিযোগিতা প্রথম প্যারালিম্পিক গেমস হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৭৬ সালের প্যারালিম্পিক গেমস থেকে শুরু করে, অংশগ্রহণকারীরা শুধু মেরুদণ্ডের আঘাতে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং অন্যান্য শারিরীক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদও অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি শর্ত দেয় যে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস ও প্যারালিম্পিক গেমস একই শহরে অনুষ্ঠিত হতে হবে। সেই থেকে প্যারালিম্পিক গেমস ও অলিম্পিক গেমস একই থিম ও স্লোগান ভাগ করে নিয়েছে।