জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন উন্নত শিক্ষকসমাজ
জাতি-গঠনের জন্য উপাদান মানুষ, মানুষের দল, মানুষের সম্প্রদায় ও মানুষের আশা-আকাঙক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনা ও কর্মসামর্থ্য সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। জ্ঞানের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন, বিশেষ করে স্বল্পবিত্তের দেশে, বহু মানুষের দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সামরিক শাসন বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে যে জাতিবৈরী সৃষ্টি করেছে, তাতে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো রক্তাক্ত হয়েছে শত বছর ধরে। বাংলাদেশে আজ জাতি-গঠনের প্রশ্নটি বিশেষভাবে বিবেচনাযোগ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
জাতি-গঠনের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। যার কর্মসূচি হওয়া উচিত দক্ষ মানুষ গঠন। সৃজনশীল মানুষ, মুক্তবুদ্ধির মানুষ তৈরী করা। কুশিক্ষা এরকম মানুষ তৈরী করতে পারে না, পারে সুশিক্ষা যেখানে দক্ষতা, মানব হিতৈষণা ও সৃজনশীলতার বিকাশ প্রধান বিবেচনার বিষয় হবে। সারা পৃথিবীতে এখন কাজের মানুষ প্রয়োজন, কথার মানুষ নয়, জ্ঞানী মানুষের প্রয়োজন,
সুশিক্ষাই এ ধরনের মানুষ- সৃষ্টির পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষা ছাড়া মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের আর কোনো উত্তম পন্থা নেই। সেজন্য শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষ হওয়ার শিক্ষা। ইতিবাচক শিক্ষাই হচ্ছে সুশিক্ষা । সুশিক্ষার প্রশ্নটি বিশেষ অবস্থায় বিশেষ মনোযোগের সঙ্গে আলোচিত হওয়া সঙ্গত। কারণ, শিক্ষার অনেক দিক আছে যেগুলো ইতিবাচক নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আত্মরক্ষার শিক্ষা সুশিক্ষা আর আত্মহনন কুশিক্ষা। শত্রু-নিধন যুক্তিসঙ্গত বলে বিবেচিত হয়, কিন্তু ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। মানুষ হত্যা পাপ কিন্তু ঘাতককে প্রতিহত করা ন্যায়সঙ্গত। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে মানুষ হত্যা দেখে অহিংসার শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে প্রাণী-হত্যা মহাপাপ বলে প্রচার করেছিলেন। সুশিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার ইতিবাচক মাত্রা। এই ইতিবাচক মাত্রা সমৃদ্ধ হলে মানুষ সত্যিকারের সভ্য মানুষ হয়ে উঠতে পারে । তাহলে মানুষের পক্ষে সমাজ-গঠন, জাতি-গঠন ও রাষ্ট্র-গঠন সহজ হয়ে ওঠে। সুশিক্ষার জন্য অনেকগুলো পূর্বশর্ত থাকে। সুশিক্ষার জন্য প্রথমে প্রয়োজন সুশিক্ষার উপযোগী শিক্ষাক্রম, শিক্ষাক্রম তখনই সার্থক হতে পারে যখন শিক্ষাক্রমানুযায়ী সুশিক্ষার উপযোগী উপকরণ তৈরী করা হয়। পাঠ-উপকরণ সুশিক্ষার উপযোগী হওয়ার পরও পূর্বশর্ত থাকে এবং তা হচ্ছে শিক্ষা উপকরণ আনন্দময় করে উপস্থাপন করার দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক। একজন সুশিক্ষকই সুশিক্ষার রক্ষাকবচ।