জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন উন্নত শিক্ষকসমাজ
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেপথ্যে কাজ করেছে বাংলা ভাষা ভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের চিন্তাধারা। কিন্তু, সরকারি অফিস আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষার শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায় নি। স্বাধীনতা পরবর্তী অর্ধশতাব্দীতে না-পারা কাজটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের নেতৃত্বে শিক্ষিত সমাজকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম ও জনগণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা সংবাদ উঠে এসেছে। নানা ধরণের সমস্যাও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যাগুলো লুকিয়ে রয়েছে আরও গভীরে। সেদিকে নজর দেওয়া যাক।
বাংলাদেশের ‘জাতি’ ও ‘রাষ্ট্র’ নিয়ে কথা বলার শুরুতে ‘জাতি' শব্দটির প্রতি নজর দেওয়া দরকার। আভিধানিক অর্থে এর নানাবিধ মাত্রা আছে। বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে সাতটি অর্থ দেওয়া হয়েছে। সেই অর্থ থেকে দেখা যায় আভিধানিক অর্থে জাতি বলতে যা বোঝায়, রাজনৈতিক অর্থে হুবহু তা বোঝায় না। রাজনৈতিক জাতি বা জাতি-রাষ্ট্র ইংরেজি Nation or Nation state- এর ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত।
জাতিরাষ্ট্রগুলোর উদ্ভবের ঐতিহাসিকতা যাচাই করলে দেখা যায় ইউরোপে অষ্টাদশ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে রাষ্ট্রসত্তাগুলোর আবির্ভাব ঘটেছিল তার পেছনে ভাষিক, ভৌগোলিক, ঔপনিবেশিক ইত্যাকার নানা উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। সেই প্রক্রিয়া পরবর্তীকালে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিক জাতিসত্তার উদ্ভব ঘটায়। জাতি-রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রয়োজনে, সংহতির প্রয়োজনে এবং আর্থ-সামাজিক কারণে জাতি-গঠন বা ন্যাশন বিল্ডিং 'Nation Building'-এর ধারণা জন্ম নেয়। এই প্রক্রিয়া কার্যকর করতে গিয়ে দুটো প্রবণতা চোখে পড়ে।
জাতি গঠন করতে হলে যথোপযুক্ত শিক্ষা প্রয়োজন, জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য-চেতনার সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন, প্রয়োজন দুনিয়ার সব জাতিরাষ্ট্রের নির্মাণ প্রকৌশল সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা।