মহামারির হুমকি ও মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে দেশ
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি বাংলাদেশে মুল্যস্ফীতি ডেকে আনতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা। গত চার দশকের মধ্যে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি। যা এখন যখন সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি। এটিকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক- ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এজন্য বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে ঋণ গ্রহণকে দাবি করেছে ফেড। আর সেই প্রেক্ষাপটেই নীতি সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মার্চের পর তৃতীয়বারের মতো সুদের হার বাড়ালো ফেড। সামনের মাসগুলোতে তা আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ফেড।
ফেডের সুদ হার বাড়ানোতে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমছে। শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। আর তার বিপরীতে মান কমছে বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রার। সবশেষ গ্লোবাল ডলার ইনডেক্স অনুসারে ডলারের মান বেড়েছে। আমরা জানি, বৈশ্বিক পণ্যমূল্য নির্ধারিত হয় মার্কিন মুদ্রা ডলারে। তাই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শক্তিশালী ডলার কেউ চায় না। বিশেষত আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য। কারণ আমদানি করতে বড় অংকের ডলার চলে যাবে দেশের বাইরে। দেখা দেবে ডলারের সংকট। পাশাপাশি, গত কয়েক মাসে দেশে রপ্তানি ও রেমিটেন্সের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। সেক্ষেত্রে বিনিময় হার ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েকদফা পরিবর্তন করেও সামাল দেয়া যায় নি। এ অবস্থায় সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে নিয়মিতই ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৭০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক- যাতে টান পড়ছে রিজার্ভে।
ফেডের সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে ইতোমধ্যে দেশের পণ্য ও মুদ্রা বাজারে চলছে অস্থিরতা। নতুন করে ফেডের সুদ হার বৃদ্ধি এই অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের আর্থিক বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বাড়বে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্থানীয় মুদ্রার মান অবনমন হবে। এর ফলে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে ডলার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবে। বাজারে দেখা দেবে দেবে মূল্যস্ফীতি। তখন বাজার থেকে নিত্যপণ্য কিনতে ভোক্তাকে দিতে হবে বাড়তি অর্থ।