বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: জনবান্ধব বনাম ব্যবসাবান্ধব
অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে বক্তৃতায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করলেও তার সমাধানে যথাযথ নির্দেশনা দিতে পারেননি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
অর্থমন্ত্রীর বিশাল বাজেটের মধ্যে সিংহভাগ অর্থাৎ ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকাই অনুন্নয়ন ব্যয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, মঞ্জুরি, ভর্তুকি ও দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে চলে যাবে রাজস্বের প্রায় পুরো অর্থ। এর মধ্যে সুদ বাবত ১৯.২ শতাংশ, বেতন_ভাতা বাবদ ১৭.৭ শতাংশ, ভর্তুকী প্রণোদনা বাবদ ১৭.২ শতাংশ আর মঞ্জুরি সহায়তা বাবদ রাখা হয়েছে ১৬.১ শতংশ। বাজেটের মাত্র ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও তা যথেষ্ট নয়। আগামী জাতীয় বাজেট ১৪ শতাংশ বাড়লেও স্বাস্থ্যখাতে তা বেড়েছে ১২ শতাংশ। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ১১.৯২ শতাংশ। এবার তা বেড়ে হয়েছে বাজেটের ১২.০১ শতাংশ। কিন্তু শিক্ষা বাজেট মোট বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ হওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা বাজেট জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েছে তুলনামূলকভাবে বেশি। গতবাররে মতোই স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের চেয়ে বেশি। এবার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যেখানে ৫.৪০ শতাংশ, সেখানে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৫.৯০ শতাংশ। সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বরাবরের মতোই এক শতাংশের নিচে। এরকম অনেক খাতেই বরাদ্দে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
করোনা মহামারির পর মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ আশা করেছিল বাজেটে তাদের জন্য স্বস্তির কিছু থাকবে। কিন্তু দৃশ্যত বাজেটে মধ্যবিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বস্তির কিছু রাখেননি অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। যদি ব্যবসায়ীদের করপোরেট করহার আরও কমানো হয়েছে। এবারও আড়াই শতাংশ করে তৃতীয় বারের মতো কমেছে করপোরেট করহার। বেতনের বাইরে করমুক্ত ভাতা ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।