‘পাঁচ পুত্রের গান’ থেকে চীনে জনগণের ভূমিকা দেখে
চীনের "রাজনৈতিক নৈতিকতার" শাসনের ঐতিহ্য থেকে ভিন্ন, মূলধারার পশ্চিমা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশ্বাস করে যে জাতীয় শাসনে ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাকে কেন্দ্র করে ‘ক্ষমতার উত্স, বন্টন এবং নিয়ন্ত্রণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে’। তারা গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে দ্বিমুখী বিরোধিতা পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাল এবং খারাপ শাসনের মূল্যায়ন করে, যা বিশেষ করে গণতন্ত্র সম্পর্কে তাদের ধারনায় প্রতিফলিত হয়। পশ্চিমা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ অনুসারে, গণতন্ত্রকে সাধারণত একধরনের পদ্ধতিগত গণতন্ত্র হিসেবে বোঝানো হয়। বাস্তবে, ‘এক মানুষ, একটি ভোট’-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা বহু-দলীয় ব্যবস্থার বৈধ নির্বাচন ব্যবস্থায় মূর্ত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমে আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক অনেক ঘটনা, এই ব্যবস্থাটির প্রতি প্রায়শই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগায় যে, ‘এক মানুষ, একটি ভোট’ প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে কিনা এবং তা প্রকৃত গণতন্ত্র অর্জন করতে পারে কিনা? জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেও তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করতে না পারে, তাহলে এটাই কি গণতন্ত্র? জনগণ সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে– এটা কি গণতন্ত্র নয়?
বিপরীতে, চীন সর্বদা ‘বাস্তব গণতন্ত্রে’র দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে আসছে। অর্থাত বাস্তবে, জনগণের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থ থেকে শুরু করে সুশাসনের ফলাফল মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট মডেল সত্যিকার অর্থে জনগণের নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটাতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করে। ক্রমাগত জাতীয় অবস্থার পরিবর্তন অনুসারে বাস্তবায়নের পথকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়। কখনও গণতন্ত্রের উপর জোর দেওয়া হয়, কখনও আইনের শাসনের উপর জোর দেওয়া হয়, এবং কখনও কখনও প্রকৃত প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে শাসন না করার উপর জোর দেওয়া হয়। সংক্ষেপে, রাজনৈতিক নীতি থেকে বিচ্যুত না হয়ে নমনীয়ভাবে নিজস্ব পথ বেছে নেওয়া। বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতিতে রাজনৈতিক জীবনকে সর্বদা জনগণের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম করে তোলাই হলো সার কথা।
‘জনগণই দেশের ভিত্তি, এবং ভিত্তি মজবুত হলে দেশ শান্তিতে থাকে’– এই জনগণকেন্দ্রিক চিন্তাধারা হল শাসনের পদ্ধতি যা চীনা সভ্যতায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চর্চিত হয়েছে। এটি একটি দুর্দান্ত পদ্ধতি। যার মাধ্যমে অতীতের চীন বিশাল ভূখণ্ড এবং বহু-জাতিগত দেশ হয়েও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, এটাই চিরন্তন সত্য যে জনগণই দেশের কর্তা, এবং জনগণই মৌলিক শক্তি যা দেশের ভবিষ্যত ও ভাগ্য নির্ধারণ করে।