‘পাঁচ পুত্রের গান’ থেকে চীনে জনগণের ভূমিকা দেখে
‘শাং শু’ চীনের প্রাচীনতম ইতিহাস বই। এতে ‘পাঁচ পুত্রের গান’ গল্পটি লিপিবদ্ধ আছে। শিয়া রাজবংশের (খ্রিস্টপূর্ব ২০৭০-খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০) সময়, সম্রাট ইউ-এর নাতি থাংখাং সিংহাসনে ছিলেন কিন্তু সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন না এবং আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকতেন। ফলে তার প্রতি জনগণের অসন্তোষ ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। কিন্তু তিনি তখনও জানতেন না এবং একশো দিনেরও বেশি সময় ধরে শিকারে বেড়াতে গেছেন এবং রাজধানীতে ফিরে আসেননি।
শিয়া রাজবংশের ইয়ৌছিং উপজাতির নেতা হৌ ই জনগণের অভিযোগ দেখে ক্ষমতা দখলের সুযোগ নেন। থাংখাংয়ের পাঁচ ছোট ভাই তাকে গভীরভাবে দোষারোপ করেছেন। তাই তারা পাঁচজন তাদের পূর্বপুরুষ দাইউ-এর নির্দেশ অনুসরণ করে থাইখাংকে উপদেশ দেওয়ার জন্য একটি কবিতা লিখেছিল। এটিই ‘পাঁচ পুত্রের গান’।
‘পাঁচ পুত্রের গান’ ৪ হাজার বছরেরও বেশি আগে শিয়া রাজবংশের সময় লেখা হয়েছিল। এটি এখন পর্যন্ত চীনা সভ্যতায় আবিষ্কৃত প্রাচীনতম কবিতা। এটি সম্রাটের পরাধীনতার জন্য একটি দীর্ঘশ্বাস এবং চীনাদের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে আদি রাজনৈতিক দর্শনকে প্রতিফলিত করে। তা হল ‘জনগণই দেশের ভিত্তি, ভিত্তি মজভুত হলে দেশ শান্তিতে থাকে।‘
থাইখাং-এর ব্যর্থতা উল্টোভাবে প্রমাণ করেছে যে ‘জনগণই দেশের ভিত্তি’। প্রাক-ছিন রাজবংশের সবচেয়ে মৌলিক রাজনৈতিক ধারণা হিসেবে, এই ধারণাটি চীনা সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছে এবং সমস্ত প্রজন্মের রাজনীতিবিদ এবং চিন্তাবিদদের দ্বারা একটি নির্দেশিকা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। এই নিয়মের পিছনের উপস্থিত গভীর কারণটি ‘লি চ’ বইতে লিখিতে আছে, ‘মহান নিয়ম হল, জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য কাজ করা।’
মহান শাসন নিয়ম সারা পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য। দেশ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট স্বার্থ গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দেশ হল জনগণের দেশ। দেশের সকল উদ্যোগ, আইন এবং অর্জন জনগণ দ্বারা অর্জিত হয়। জনগণ সমানভাবে দেশের প্রতি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা ভোগ করে। তাই দেশ ও জনগণ একটি অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি। দেশের মালিকানা জনগণের হাতে, আর জনগণই দেশের মালিক।