প্রাচীন গল্প থেকে চীনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বোঝা
কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান এবং শাসন ব্যবস্থা এমনি এমনি হয়ে যায় না, তাদের অবশ্যই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্স রয়েছে। প্রাচীন চীন জনগণের অবস্থা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন ছিল, জনগণকেন্দ্রিকতাকে শাসনের মূল বিষয় হিসাবে বিবেচনা করেছিল এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ ও জনগণের সামগ্রিক স্বার্থকে শাসনের মৌলিক সূচনা বিন্দু হিসাবে গ্রহণ করেছিল। "উন্নয়ন জনগণের জন্য, উন্নয়ন জনগণের উপর নির্ভর করে, এবং উন্নয়নের ফল জনগণই ভোগ করে’- এমন ধারনা, প্রাচীন জনকেন্দ্রিক প্রজ্ঞাকে আত্মস্থ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক উদ্ভাবন এবং এটি উত্তরাধিকার ও জনকেন্দ্রিক চিন্তাধারার বিকাশ।
জনগণকে সবার আগে রাখা এবং জনগণের জন্য রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা শুধু একটি স্লোগান নয়, প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বহু প্রজন্মের সাধু, সম্রাট, রাজা এবং পরোপকারী মানুষ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ যুগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে প্রশংসিত হতে পেরেছেন। কারণ তারা জ্ঞান ও কর্মে সমন্বয় করেছেন এবং বিশ্বের কল্যাণকে নিজের দায়িত্ব হিসাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা সমস্ত সংবেদনশীল প্রাণীদের উপকার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
‘শাংশু’তে লেখা হয়েছে, ঋষী শুন নিজের সিংহাসন ঋষী দায়ুকে দেওয়ার পর, দায়ু বলেছিলেন যে দেশটি জনগণের উপর ভিত্তি করে এবং রাজা জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। শাসকের নিজের সদগুণ থাকলে এবং ন্যায়বিচারের মনোভাব নিয়ে দেশ শাসনের মূল বিষয় হল, জনগণ এবং প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা এবং সদগুণ দিয়ে শাসন করা।
তাহলে সুশাসন কাকে বলে এবং কীভাবে জনগণকে সুশাসন দেয়া যায়?
এটি ‘কনফুসিয়াসের পারিবারিক উক্তি’ বইতে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। লু-এর রাজা আইকং কনফুসিয়াসকে জিজ্ঞাসা করলেন কীভাবে শাসন করতে হয়। কনফুসিয়াস বলেছিলেন: "মানুষকে ধনী এবং দীর্ঘজীবী করে তোলা– একটি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।" লু আইকং আবার জিজ্ঞাসা করলেন: "আমরা কীভাবে এটি অর্জন করতে পারি?" কনফুসিয়াস বলেছিলেন: "আমাদের অবশ্যই জনগণের চাপ কমাতে হবে। সরকারি বা সামরিক পরিষেবাগুলো কমাতে হবে এবং সুবিধার পথ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের কাছ থেকে কর আদায় কমাতে হবে, যাতে জনগণ একটি সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে। একই সাথে, দেশের শিক্ষার শিষ্টাচার, সংগীত এবং নৈতিকতার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যাতে জনগণ তাদের নৈতিক চরিত্রকে মৌলিকভাবে গড়ে তুলতে পারে, বিশ্বাস ও সম্প্রীতির অনুশীলন করতে পারে। যাতে তারা পাপ ও বিপর্যয় থেকে মুক্ত হতে পারে, মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বসবাস করতে পারে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এর মাধ্যমে দেশ শান্তি ও স্থিতিশীল হতে পারে এবং রাজস্বও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।"