সমতা, সম্মান, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শিক্ষা প্রসঙ্গ
সব জিনিসের মধ্যে পার্থক্য থাকে। পার্থক্যের প্রতি মনোভাব সরাসরি একটি দেশের কূটনৈতিক দর্শন নির্ধারণ করে। প্রাচীনকাল থেকেই চীন বিশাল দেশ এবং এখানে বাস করছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। স্বতন্ত্র জাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও পার্থক্যের মধ্যে, আমরা সমতা, সম্মান, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শিক্ষার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছি এবং আমরা একটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার, ও জয়-জয় সহযোগিতার নতুন ধরনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আসুন চীনের "শি চি" বইয়ে লিপিবদ্ধ একটি গল্পের কথা বলি। বসন্ত ও শরত সময়কাল (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৭৭০ থেকে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৪৭৬) চীনের ইতিহাসে রাজ্যগুলির মধ্যে একটি বড় বিরোধের যুগ ছিল। "শি চি" অনুসারে, সেই সময়ে চীনে ১০০টিরও বেশি ছোট-বড় রাজ্য ছিল। চৌ রাজপরিবারের পতনের কারণে, এসব রাজ্য মোটামুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তখন রাজ্যগুলির মধ্যে বহুপাক্ষিক কূটনীতি হয়ে ওঠে মূলধারা।
প্রাচীন চীনারা "শিষ্টাচার”-এর ওপর অনেক গুরুত্ব দিতো। শিষ্টাচার ছিল ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর সাথে গোষ্ঠীর সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কনফুসিয়াস একবার বলেছিলেন: "আপনি যদি শিষ্টাচার না শেখেন, তবে আপনি সমাজে দাঁড়াতে পারবেন না।" বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময়ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার অনুসারে পরিচালিত হয়। তত্কালে "আন্তর্জাতিক আইন" মানে ছিল “চৌ রাজবংশের শিষ্টাচার”। তখন রাজাকে সম্মান করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি ছিল। যুদ্ধের সময়ও সামরিক শিষ্টাচার মেনে চলা হতো। এটি এক ধরনের আন্তর্জাতিক আইন, যা বহু রাষ্ট্রের যুগে অনুসরণ করা আবশ্যক।
এ ছাড়া, কিছু অলিখিত আইন ও প্রবিধান ছিল, যা সাধারণত অনুসরণ করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নিতো, তখন আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিত। এরপর অন্য পক্ষের কাছে যুদ্ধের জন্য দূত পাঠাতো। অবশেষে সম্মত তারিখে যুদ্ধ হতো। নিয়ম ছিল, অঘোষিত যুদ্ধে যাওয়া যাবে না। আরও নিয়ম ছিল: যুদ্ধের সময় "ড্রাম বাজালে সৈন্যরা অগ্রসর হবে", "সৈন্যদের ব্যূহ গঠিত না-হওয়া পর্যন্ত হামলা করা যাবে না", "বিশৃঙ্খল বাহিনীকে আঘাত করা যাবে না", "আগত দূতদের হত্যা করা যাবে না" এবং "বন্দীদের হত্যা করা যাবে না" ইত্যাদি। যুদ্ধের এসব নীতি মেনে চলতে হতো।