পিতামাতার সাথে না-থাকা বাচ্চাদের যত্নে সহকারী শিক্ষকদের প্রচেষ্টা
মেয়েদের বাড়ির অবস্থা দেখে শিক্ষক লিনের খুবই দুঃখ হয়। পরের দিন তিনি আবারও অন্যান্য সহকারী শিক্ষকের সাথে জেলার দোকান থেকে গরম পানির পাত্রসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে উ ছিংয়ের বাড়িতে যান। তাঁরা তাদের বাড়িঘর পরিষ্কার করেন এবং ঘরের কাজ কিভাবে করা যায়, তা মেয়েদের শিখিয়ে দেন।
কয়েক দিন পর আবারও স্কুল থেকে ছুটি নেয় উ ছিং। এবার শিক্ষক লিন আবারও তাদের বাড়ি আসেন। তখন মেয়ে দরজাও খুলতে নারাজ। জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, উ ছিংয়ের বাবা দু’মেয়েকে একটি স্মার্ট ফোন কিনি দিয়েছেন, যাতে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন। কিন্তু মেয়ে উ ছিং দ্রুতই মোবাইল ফোনে গেমস খেলায় আসক্ত হয়ে যায়। রাত দুটা পর্যন্তও সে গেমস খেলতে থাকে। ফলে স্কুলে যাওয়ার সময় মিস করে। আর তাঁর ছোট বোন দিন-রাত টেলিভিশন দেখে। সেও প্রায়ই স্কুলে যায় না।
শিক্ষক লিন তাদের জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার ও টেলিভিশন দেখার সময় নির্ধারণ করে দেন এবং তাদের লেখাপড়ার সঠিক পরিকল্পনাও ঠিক করে দেন।
মেয়ে উ ছিংয়ের বাড়িঘরের অবস্থা অনেক দুর্বল, বাতাস বা বৃষ্টি থেকে বাঁচা মুশকিল। বাড়িতে বিভিন্ন বিদ্যুতলাইনও এলোমেলো ও বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ছিংশান প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় তাদের বিদ্যুতলাইন ঠিক করা হয়।
শিক্ষক লিনের প্রচেষ্টায় জেলা থেকে বিশেষ ভাতা পেয়েছে উ ছিং। ভাতার টাকা দিয়ে তাদের বাড়িঘরের জন্য নিষ্কাশনব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে এবং বাড়িঘর মেরামতও করা হয়েছে। মেয়ে উ ছিংয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার পর বহুবার তাদের বাড়িতে গেছেন শিক্ষক লিন। এভাবে টানা দুই সেমিস্টার পার করেন শিক্ষক লিন। ধীরে ধীরে মেয়ে উ ছিংয়ের জীবনযাপনের অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। তাঁরা সুশৃঙ্খলভাবে বাড়িতে বিভিন্ন জিনিস রাখা শেখে এবং নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলতে শেখে। নতুন টেবিলে সময়মতো হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করতেও শুরু করে তাঁরা। শিক্ষক লিনের প্রতি দু’মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যায়। এ সম্পর্কে শিক্ষক লিন বলেন, এ দুটি মেয়ের মানসিক অবস্থা ভালো নয়। তারা যেন হেজহগের মতো। তবে, তাদের সাথে নরম ও আন্তরিক ব্যবহার করা দরকার। এভাবেই তাদের জীবনপদ্ধতি বদলে দেওয়া সম্ভব।