যখন আফ্রিকার আখ চীনের সাথে দেখা করে
মরিশাসের ‘স্বর্গে’র সুনাম সুপরিচিত। তার আরেকটি নামও আছে, সেটি হলো ‘মিষ্টি দ্বীপ’। নামটি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল—আখ থেকে এসেছে। গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে স্বাধীনতার প্রথম দিকে, দেশটির আবাদী জমির মধ্যে ৯০ শতাংশে আখের চাষ ছিল। চিনি শিল্প একসময় দেশটির জিডিপি’র প্রায় একতৃতীয়াংশ এবং রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি ছিল।
কয়েক দশক ধরে, মরিশাস সরকার অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য নীতি কার্যকর করে, অর্থ ও পর্যটনসহ বিভিন্ন তৃতীয় শিল্প দ্রুততার সাথে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিনি শিল্প স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলেছে। দেশটির চিনি শিল্প যৌথ সংস্থার সিইও দেবেশ দুকিরা জানান, আখের চিনি উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ছোবড়া ও গুড় ইত্যাদি উপজাত দ্রব্যের সঙ্গে দেশটির জিডিপিতে চিনি শিল্পের অবদান হার ২ শতাংশের বেশি। একই সময় চিনি শিল্প বহু কর্মসংস্থান আকর্ষণ করে। ৮ হাজারের বেশি আখ চাষী ছাড়া, আখ কাটা, চিনি প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবহন ইত্যাদি কর্মী রয়েছে। চিনি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখা মরিশাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু চলতি শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে দেশটির চিনি শিল্পকে কঠোর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এক দিকে, দেশটির চিনি শিল্পের মাত্রা ছোট, কিন্তু উচ্চ শ্রম খরচ মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার অসুবিধা যথাক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠে। অন্য দিকে, মরিশাসের আখের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইউ’র আমদানিকৃত চিনি কোটা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে দেশটির চিনি রপ্তানি মন্দা দশায় পড়ে।
ইইউ’তে রপ্তানি বিঘ্নিত হওয়ার সময়ে মরিশাসের চিনি চীনের বাজার খুঁজে পায়। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি, চীন ও আফ্রিকান দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে, চীন-মরিশাস অবাধ বাণিজ্য চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। চুক্তিতে মালামাল বাণিজ্য, পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে মালামাল বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীন ও মরিশাসের চূড়ান্ত শূণ্য শুল্ক পণ্য ট্যাক্স আইটেম অনুপাত যথাক্রমে ৯৬.৩ ও ৯৪.২ শতাংশ। পরিষেবা ক্ষেত্রে দু’পক্ষ প্রতিশ্রুত উন্মুক্ত শাখা বিভাগের সংখ্যা শতাধিক।