মেড ইন চায়না বিষয়: কাগজ
শুরুর দিকে চীনে যে কাগজ শুধু লেখার কাজেই ব্যবহৃত হতো তা নয়। ৬০০ থেকে ৯০০ সালের দিকে থাং সাম্রাজ্যের সময় চীনে চা পাতা সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতো কাগজ। কাগজে মুড়ে রাখা হতো চা। এতে চায়ের স্বাদ থাকত অটুট। পরবর্তীতে সেটা থেকেই কিন্তু আসে টি-ব্যাগের ধারণা।
নানা ধরনের প্যাকেজিংয়েও ব্যবহৃত হতো কাগজ। বিশেষ করে দ্বিতীয় শতকের দিকে চীনে ব্রোঞ্জের তৈরি আয়নার কদর বাড়ে বেশ। ওই আয়না মোড়ানো হতো কাগজ দিয়ে। আবার প্রাচীন চীনে কীটনাশক জাতীয় বিষাক্ত উপাদান মুড়িয়ে রাখতে কাগজের ব্যবহার ছিল, যখন কিনা ইউরোপের লোকজন কাগজ চোখেই দেখেনি।
তৃতীয় শতক থেকে কাগজে লেখার চল শুরু হয় চীনে। আর মজার ব্যাপার হলো, ৮৭৫ সালে বাকি বিশ্ব যখন কাগজ হাতে ধরে দেখেনি, চীনারা তখন টয়লেট পেপারও ব্যবহার করতো।
কাগজের উৎপাদন ও বাণিজ্যেও কিন্তু চীন এখন বিশ্বসেরা। ২০২২ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে ওই বছর চীনে কাগজের পালপ ও কাগজ তৈরি হয়েছে ২৮ কোটি টন। এর মধ্যে চীনেই ব্যবহৃত হয়েছে ২৩ কোটি টন। আর চীনে কাগজের ব্যবহার এতটা বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে চীনের উৎসব। কারণ দেশটির প্রায় সব উৎসবেই চাই নানা রঙের, নানা আকারের কাগজ। কাগজ কেটে শিল্পকর্ম তৈরি করাটাও চীনের ঐতিহ্য। যেকোনো উৎসবে ঘর সাজাতেও চীনে ব্যবহার করা হয় কাগজ। কদিন আগে শেষ হওয়া বসন্ত উৎসবের শেষ দিনের লণ্ঠন উৎসবেও লাখ লাখ লণ্ঠন বানানো হয়েছিল কাগজ দিয়েই।
এই ফাঁকে বলে রাখা যায়, কাগজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন চীনের হার্ডবোর্ডের উৎপাদন এবং আমদানিও বাড়ছে। আবার রিসাইকেল করার জন্য বাতিল ও ব্যবহৃত কাগজের আমদানিও বাড়িয়েছে চীন।
২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার টন। কাগজের কাঁচামাল পালপ আমদানি কিংবা কাগজ সংক্রান্ত শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও চীন নানা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তবে কাগজ রপ্তানিতেও চীন সেরা। ২০২২ সালে চীন থেকে পাল্প, কাগজ এবং কাগজ পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ টন। যা থেকে আয় হয়েছিল ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, আধুনিক নানা ধরনের ডিসপ্লে প্রযুক্তির যুগেও চীনের হাত ধরে কাগজ টিকে থাকবে আরও বহুকাল।