পশ্চিম মুখে আমার যাত্রা-পর্ব ২
গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা রিতু জেলায় শিলাচিত্র শুটিং করতে নো ম্যান’স ল্যান্ডে প্রবেশ করার কথা জানিয়েছিলাম। তারপর কী ঘটলো? আজকের অনুষ্ঠানে শোনাবো আমাদের সে যাত্রা বাকি গল্প।
ফোনে নেটওয়ার্ক সংকেত না থাকায় আমরা কোনও লাইভ অনুষ্ঠান করতে পারিনি। আমি স্বর্ণা আপুর সঙ্গে আলোচনা করে ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। এ শিলাচিত্রগুলোর অবস্থান পাহাড় বা ক্লিফে। সেখানে পৌঁছতে আমাকে পাহাড়ে আরোহণ করতে হয়। ক্লিফে দুটো পা রাখার জায়গা ছাড়া আর কোনও স্পেস নেই। আমি ক্লিফে দাঁড়িয়ে ভিডিও শুটিং করি। স্বর্ণা আপুও খুব ভাল উপস্থাপনা করেন। নিরাপদে আমরা সেদিনের কাজ সম্পন্ন করি। আমরা যখন রিতু জেলার হোটেলে ফেরার যাত্রা শুরু করি তখন রাত ৯টার মতো বাজে। অন্ধকার হবার আগে সীমান্তের নো ম্যান’স ল্যান্ড ছেড়ে আসতে হয়। আরও কয়েক ঘন্টা পর রাতে ১১টার দিকে আমরা হোটেলে পৌঁছাই। আর ওই রাতে কোনও খাবার খাই না। রুমে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়ি। তিব্বতে আসার পর আমি দিনে সর্বোচ্চ ৫-৬ ঘন্টার মতো ঘুমাতে পারি। মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। আর এমন সময়সূচিও পরবর্তিতে আমাদের দৈনিক জীবনে পরিণত হয়। দু এক দিন পর একবার হোটেল পরিবর্তন করি। একটি জেলা থেকে অন্য একটি জেলায় গেলে কমপক্ষে দু ঘন্টার মতো সময় লাগে। সর্বোচ্চ ৭ ঘন্টার বেশি সময়ও লাগে। আমি ভালভাবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারি না। রিতু জেলায় এক দিনের মতো থাকার পর পরের দিন আমরা জান্দা জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হই। জান্দা জেলায় আরও মজার দৃশ্য ও গল্প আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
কয়েক ঘন্টা ঘুমানোর পর আমরা রিতু জেলাকে বিদায় জানাই এবং জান্দা জেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। যাবার পথে ৫টি উঁচু পাহাড় অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে কোন কোনটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার মিটারেরও বেশি। আমি গাড়ির সামনের আসনে বসি। পাহাড়ের সড়ক থেকে দেখলে মনে হয় আমরা যেন রোলার কোস্টারে চড়েছি। অনেক তীক্ষ্ণ বাঁক সড়কে। আর যেন হাত বাড়ালে মেঘ স্পর্শ করা যায়। ৩৭০ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছতে আমাদের ৭-৮ ঘন্টা লাগে। মাঝপথে দুপুরের খাবার খেতে অজানা এক গ্রামে একটু থামি আমরা। স্বর্ণা আপু সে সময় বেশ অসুস্থ বোধ করেন। তাই অল্প কিছু খাবার খাওয়ার পর কাছাকাছি একটি ক্লিনিকে যান। ওখানে আবার এক ঘন্টার মতো অক্সিজেন নেন। আমি তাকে দেখতে যাই এবং তার সঙ্গে থাকি। আমার তখন অক্সিজেন নেওয়ার দরকার হয় না। তবে বাকি পথ পাড়ি দিতে অক্সিজেন লাগতে পারে। ক্লিনিকে বিশেষ এক ধরনের ব্যাগ বিক্রি হয়। এটি বেলুন বালিশের মতো; ভেতরে অক্সিজেন ভরে রাখা যায় এবং এ অক্সিজেন শেষ হলে যে হোটেলে অক্সিজেন তৈরি মেশিন আছে সেখান থেকে আবার অক্সিজেন ভরে নেওয়া যায়। এটা অক্সিজেন ট্যাংকের চেয়ে সুবিধাজনক ও সস্তা। তাই আমি একটি অক্সিজেন বালিশ কিনে নিই। স্বর্ণা আপুর অবস্থা একটু ভাল হওয়ার পর আমরা আবার জান্দা জেলামুখী যাত্রা শুরু করি। ওই দিন বিকেলে আমরা জান্দা জেলায় পৌঁছাই এবং হোটেলে যাই। তিব্বতে আসার পর আমি একবারও গোসল করিনি। বলা হয়, মালভূমিতে আসার প্রথম কয়েকদিন গোসল না করাই ভাল। কারণ অক্সিজেন ঘাটতির মধ্যে ঠান্ডা লাগলে সমস্যা গুরুতর হতে পারে। জান্দা জেলা আসার পর আমি প্রথম বারের মতো গোসল করি, ভাগ্যক্রমে এতে কিছুই হয়নি আমার। ওই দিনটি প্রায় পথেই চলে যায়। পরের দিন আমরা গুজ রাজবংশের ধ্বংসাবশেষে গিয়ে ভিডিও ধারণ করবো।