মেড ইন চায়না পর্ব-৬ ব্যাংক নোট
তবে চীনে গোটা রাষ্ট্রজুড়ে কাগুজে মুদ্রার প্রচলন হয় সং রাজবংশের আমলে। সেটাও আজ থেকে হাজার বছর আগের কথা। ওই সময় প্রথম বাজারে ছাড়া হয় আনুষ্ঠানিক ব্যাংক নোট যার নাম দেওয়া হয় চিয়াওচি। একপর্যায়ে ধাতব বা দামি বস্তুর পরিবর্তে ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ছাপানো শুরু হয় মুদ্রা। আর সেটাকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয় বাজারে।
এরপর ক্ষমতার পালাবদল হলেও হারিয়ে যায়নি কাগুজে মুদ্রা। ইউয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কুবলাই খান এসে আরেক ধরনের কাগুজে মুদ্রার প্রচলন করেন, যার নাম রাখা হয় চিয়াওছাও। শুরুর দিকে কাগুজে মুদ্রাগুলোর সময় ও ব্যবহারের সীমারেখা বেঁধে দেওয়া থাকলেও পরে মেয়াদের বিষয়টি তুলে নেওয়া হয়।
চীন থেকেই একটা সময় কাগুজে মুদ্রা আসে ইউরোপে। কিন্তু সেটার জন্য ইউরোপকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৬০০ বছর। কিন্তু এত দেরি হওয়ার কারণটা কী?
ত্রয়োদশ শতকে চীনে আসেন ইতালির ভ্রমণচারী ও বিশ্বখ্যাত ভূ-পর্যটক মার্কো পোলো। তিনি এসে দেখেন শাসক কুবলাই খান নিজের কোষাগার থেকে বাজারে ছড়াচ্ছে কাগুজে মুদ্রা নামের একটি বস্তু। লোকজন সেটাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং যত্ন করে আগলে রাখছে। কাগজের টাকার অদ্ভুত এই রাজ্যে এসে মার্কো পোলো বেশ অবাক হলেও দ্রুত তিনি বুঝতে পারেন, এর গুরুত্ব। বিষয়টা দেখে মার্কো পোলো যখন সবাই তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন, তখন কিন্তু কেউ সাদরে নেয়নি বিষয়টাকে। উল্টো পোলোকে বিকারগ্রস্তও বলেছিলেন কেউ কেউ। যে কারণে পশ্চিমা বিশ্বে কাগজের মুদ্রা আসতে লেগেছিল আরও ৬০০ বছর।
চীনে কাগুজে নোট তৈরি হতো কী করে? সেই গল্পটা শোনা যাক এবার।
কুবলাই খানের আমলে মালবেরি গাছের নরম ও খানিকটা ভেজা কাঠ ছিল কাগজের নোট তৈরির মূল কাঁচামাল। গাছের বাকল ও কাণ্ডের মাঝখানে পাওয়া যায় ওই নরম কাঠ। তারপর এই কাঠের সাথে আঠা মিশিয়ে দেওয়া হয় প্রচণ্ড চাপ। এতে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের কাগজ। ওটা হতো কালো রঙের। বেশ সাবধানে তৈরি করতে হতো সেটা। এরপর ওই কাগজ চলে যেত রাজ কোষাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দরবারে। নোটে মালিকের নাম এবং মূল্যমান সহ লেখা হতো আরও কিছু দরকারি তথ্য। এরপর তা চলে যেত সম্রাট কুবলাই খানের হাতে। সম্রাট নিজের হাতে নোটে সিল দিয়ে দিতেন। আর তাতেই নোটটি হয়ে যেত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মূল্যবান একটি বিনিময় মাধ্যম। ওই সময় চীনে এ ধরনের সরকারি নোট ছাড়া কোনো প্রকার বাণিজ্যিক লেনদেনের কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না।