‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ৪
চীনের বাজার এবং এর অর্থনীতির ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে দারুণ আশাবাদী, সেটার প্রতিফলন ঘটছে চীনে ক্রমবর্ধমান বিদেশি বিনিয়োগে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, চীনে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালে ছিল ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান যা প্রায় ১৫৯ বিলিয়ন ডলার। চীনে বিদেশি বিনিয়োগের ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এ ছাড়াও, দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা নতুন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছর বেড়ে ৫৩ হাজার ৭৬৬-তে দাঁড়িয়েছে। যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।
চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিবিসি স্কুল অফ ফাইন্যান্সের ভাইস ডিন থিয়ান সুয়ান বলেছেন, চীনের অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে দেশটি কিছু চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি রয়েছে। যেমন বাহ্যিক কিছু প্রভাব ও অনিশ্চয়তা রয়েছে এর বাজার ঘিরে। কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর চাহিদার অভাব আছে। আবার কিছু খাতে জনগণের প্রত্যাশার সূচকে আছে ঘাটতি। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, চীনের অর্থনীতির পালে যে পরিমাণ হাওয়া লেগে আছে, বিপরীত শক্তিটা তারচেয়ে ঢের কম।
চীনেরউৎপাদন খাত এখন বিশ্বের মোট ৩০ শতাংশ জুড়ে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বাজারও চীন। এক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা যায়, তাতে কুশন হিসেবে কাজ করছে চীনের উচ্চমানের উন্নতি।
চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং চ্যাংলিন বলেন, ‘চীনা অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষমতা, সুবিধা এবং সুযোগ পাচ্ছে এবং দেশটির উন্নয়নের ইতিবাচক প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে অপরিবর্তিত রয়েছে।
২০১৪ সাল থেকেই চীনের অর্থনীতি একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়েছে। চীনের জিডিপি ২০১৪, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ছিল যথাক্রমে ৬০ ট্রিলিয়ন, ৮০ ট্রিলিয়ন এবং ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। কোভিডের পরও চীনের জিডিপি না কমে বরং বেড়েছিল। পরবর্তী দুই বছরে জিডিপি ছিল ১১০ ও ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।
।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
কর্পোরেট প্রোফাইল:
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের বাজারে অস্থিরতা ও নানামুখি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চীনের ফোল্ডেবল স্ক্রিন স্মার্টফোন শিল্প দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে চীনের তৈরি ফোল্ডেবল স্ক্রিন মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে প্রায় ১১ মিলিয়ন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানত দুটি কারণে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা থাকলেও চীনের ফোল্ডেবল স্ক্রিন ফোন বিক্রি বেড়েছে। এর একটি হলো চীনা কম্পানিগুলো ওএলইডি স্ক্রিন উৎপাদন করছে, এর ফলে ফোনের দাম কমেছে এবং বাজারে আরও বেশি বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো চাহিদা বৃদ্ধি। বর্তমানে অধিকাংশ ফোল্ডেবল ফোনে বড় স্ক্রিন এবং উন্নত মাল্টিটাস্কিংয়ের সুযোগ থাকায় এসব ফোনের চাহিদা বেড়েছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ‘অর্গানিক লাইট-ইমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) স্ক্রিন এবং ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উৎপাদন কৌশল একত্রীকরণ এই শিল্পকে ধারাবাহিক বৃদ্ধি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের ফোল্ডেবল ফোন শিল্পের আকার আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ দশমিক ৮ বিলিয়নে দাড়াবে।
মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অবস্থিত টিসিএল চায়না স্টার অপ্টোইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি কম্পানি লিমিটেড ওএলইডি স্ক্রিন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ কারখানাটি অনেক বৃহৎহলেও এতে কর্মীর সংখ্যা খুব বেশি নয়, কেননা এই কারখানার অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয় বিভিন্ন ধরনের বৃহৎ মেশিনের মাধ্যমে।
এ কারখানায় উৎপাদিত প্রতিটি নতুন মডেলের স্ক্রিন বাজারে পাঠানো আগে ভালো ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। টিসিএল সিএসওটির গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের সিনিয়র প্রকৌশলী চিয়াং চিয়াচুন জানান, ফোল্ডেবল স্ক্রিন হতে হলে প্রতিটি মডেলের স্ক্রিনকে ২ লাখের বেশি বার ফোল্ড করা হয়।
২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে ফোল্ডেবল ফোন ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছে। চালু করা ১৮টি নতুন মডেলের মধ্যে ১৩টিতেই ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তৈরি করেছে চীনা কোম্পানিগুলো।
বিগত কয়েক বছরে ফোল্ডেবল ফোনগুলো আরো বিকশিত করার ফলে মানুষের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে যখন ফোল্ডেবল স্ক্রিনের ফোন প্রথমে বাজারে আনা হয়েছিল, তখন বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফোল্ডেবল স্ক্রিন ফোনের দাম ১ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি ছিল। তবে গত চার থেকে পাঁচ বছরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিভিন্ন উপকরণে উদ্ভাবনের ফলে ফোল্ডেবর স্ক্রিন ফোনের দাম কমে ৪০০ থেকে ৬০০ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
কংমাও হোম এপ্লায়েন্সের খুচরা ব্যবস্থাপক কাও না জানান, যখন ফোল্ডেবল স্মার্টফোনগুলো কেবল বাজারে আনা হয়েছিল, তখন এর বিক্রির পরিমাণ কেবল মোটের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ ছিল। এখন সেই সংখ্যাটি ২০ শতাংশে পৌঁছেছে।
সামগ্রিক স্মার্টফোন বাজার ক্রমাগত হ্রাস পেলেও সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত বছরে চীনে ফোল্ডেবল ফোনের কম্পানিগুলো বছরে দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে।
।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শাহানশাহ রাসেল
অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী