মেড ইন চায়না: পর্ব-১৩: বারুদ
নিজেদের আবিষ্কারের এমন বিস্তৃতি দেখে তৎকালীন চীনের শাসকরাও বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এতে করে তারা বিদেশিদের কাছে বারুদের অন্যতম উপকরণ পটাশিয়াম নাইট্রেটের খনিজ তথা সল্টপিটার বিক্রির ওপর নিষেদ্ধাজ্ঞাও জারি করেন। তাতেও অবশ্য থেমে যায়নি বারুদের প্রসার।
আরব বিশ্বে শাসকরা ১২৪০ থেকে ১২৮০ সালের মধ্যে কোনো এক সময় বারুদ সম্পর্কে জানতে পারেন। সিরিয়ার রসায়নবিদ হাসান আল-রামাহ সল্টপিটার বিশুদ্ধ করার নির্দেশাবলী এবং বারুদ জ্বালানোর বর্ণনা লিখেছিলেন। গবেষক আল-রামাহ তার লেখায় সল্টপিটারকে বলেছিলেন ‘চীনা তুষার’ এবং বারুদ দিয়ে তৈরি আতশবাজিকে বলেছিলেন ‘চীনা ফুল’।
ইউরোপে বারুদ আসে আরও অনেক পরে। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, মঙ্গোলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে ইউরোপ বারুদ তৈরি করা শিখেছে।
এবার যথারীতি আমরা শুনবো বারুদ নিয়ে অন্যরকম কিছু তথ্য
অষ্টম শতকের দিকে চীনে বারুদ দিয়ে ত্বকের চিকিৎসাও করা হতো। ত্বকে পোকা-মাকড়ের কামড় বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো গান পাউডার।
কথিত আছে যে চীন যুদ্ধে বারুদের প্রথম ব্যবহার করেছিল ৯১৯ সালে। আবার ১০০০ সালের দিকে থাং ফু নামের এক চীনা যোদ্ধা নাকি প্রথম গানপাউডার বম্ব বা বারুদের বোমা আবিষ্কার করেছিলেন।
অনেকে বিশ্বাস করেন যে অনুসন্ধানকারী মার্কো পোলো প্রাচীন সিল্ক রোডের মাধ্যমে ইউরোপে চীনা গানপাউডার প্রবর্তন করেছিলেন। ঠিক এর পরের কয়েক বছরের মধ্যেই ঢাল-তলোয়ার যুগের ইতি ঘটে ইউরোপে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বারুদই ছিল একমাত্র রাসায়নিক, যেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। গানপাউডারের পর আসে ধোঁয়াহীন আরেক ধরনের বারুদ।
এবার জানা যাক বারুদের কিছু অন্যরকম ব্যবহারের কথা
চীনের আবিষ্কার বারুদকে কেবল ধ্বংসাত্মক ভাবলেই চলবে না। প্রতিটি আবিষ্কারের ভালো-মন্দ ব্যবহার রয়েছে। যেমন বারুদের একটা বড় কাজ আছে খনিতে। খনির পাথুরে দেয়ালে ফাটল তৈরি করতে এখনও ব্যবহৃত হয় বারুদ। একইভাবে টানেল তৈরিতেও কাজে লাগে বারুদের শক্তি। বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের উৎসব উদযাপনেও পোড়ানো হয় বারুদের তৈরি অগণিত আতশবাজি। যে আলো ঝলকানো বাতিটা ছাড়া জন্মদিনের কেক অসম্পূর্ণ থেকে যায়, সেখানেও আছে বারুদের কারসাজি। এমনকি সাগর, মরুভূমি বা জঙ্গলে কেউ বিপদে পড়লে আকাশের দিকে তাক করে যে সিগনাল ফ্লেয়ার ছোড়া হয়, সেটা বানাতেও লাগে বারুদ।
এ ধরনের নানা কাজে বিশ্বজুড়ে রয়েছে বারুদের বেশ ভালো চাহিদা। আর সেই চাহিদারও সিংহভাগ পূরণ করে চলেছে চীন। বিশেষ করে আতশবাজি রপ্তানিতে এক নম্বরেই আছে দেশটি। এক হিসাবে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের দিন সেখানে সবচেয়ে বেশি আতশবাজি পোড়ানো হয়। আর সেই আতশবাজির ৯৯ ভাগই আসে চীন থেকে।
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী