মেড ইন চায়না: পর্ব-১৩: বারুদ
এরপর তিনশ সালের দিকে চিন রাজবংশের সময় আরেক তাওয়িস্ট দার্শনিক কে হোংয়ের লেখাতেও পাওয়া যায় বারুদ তৈরির আরেক গল্প। বারুদের উপকরণ দিয়ে কে হোং মূলত তৈরি করতে চেয়েছিলেন স্বর্ণ। কারণ গবেষণাগারে একবার স্বর্ণের ফর্মুলা পেয়ে গেলে ধনরত্নের আর অভাব হবে না, এই ভেবে চলছিল জোর গবেষণা।
আর ওই পরীক্ষা চালাতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করেন বারুদের স্ফূলিঙ্গের উজ্জ্বল বেগুনী শিখা। অর্থাৎ এবারও স্বর্ণ বানাতে গিয়ে চীনা বিজ্ঞানী বানিয়ে ফেললেন বারুদ।
এরপর কিন্তু গান পাউডার নিয়েই চলতে থাকে গবেষণা। জাদুকরি এ গুঁড়ো দিয়ে কী কী ঘটানো যায় বা কত সহজে আরও কত শক্তিশালী বারুদ তৈরি করা যায় তা নিয়েই মূলত উঠেপড়ে লাগেন থাং রাজবংশের গবেষকরা। ওই সময়ই আবিষ্কার হয় গান পাউডারের সবচেয়ে কার্যকর ফর্মুলা।
৮০৮ সালে রচিত থাইশাং শেংচু চিনতান মিচুয়ে নামের গ্রন্থে উঠে আসে শক্তিশালী বারুদের কথা। ওই সময় বারুদকে চীনারা নাম দিয়েছিল হুয়োইয়াও বা আগুনের ওষুধ। এখনও কিন্তু চীনে বারুদ বোঝাতে ব্যবহার করা হয় হুয়োইয়াও শব্দটি।
এবার আসা যাক, গান পাউডার ওরফে বারুদের প্রথম পরিপূর্ণ লিখিত ফর্মুলার প্রসঙ্গে। শুরুর দিকে যে ফর্মুলায় বারুদ তৈরি করা হতো তাতে কিছু সমস্যা থেকে যেত। ১০৪৪ সালে চীনে লেখা হয় সমরবিদ্যার একটা ম্যানুয়াল, যার নাম উচিং চোংইয়াও। ওই ম্যানুয়েলেও ছিল বারুদের উপযুক্ত একটা ফর্মুলা। সেটাকেই ধরা হয় বারুদের প্রথম কার্যকর রাসায়নিক সূত্র।
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে উচিং চোংইয়াওর ফর্মুলাটি একসময় হারিয়ে যায়। এখন যে ফর্মুলাটি টিকে আছে সেটা লেখা হয় ১৫১০ সালে, মিং রাজবংশের সময়কালে।
খ্রিস্টাব্দ এক হাজার সালের দিকে চীনের প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল বারুদের ফর্মুলাটিকে গোপন রাখতে। কারণ, তখন অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এই ফর্মুলা ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী দেখা দিতে পারে অশান্তি। তবে এত বড় একটা আবিষ্কার কি আর সহজে গোপন রাখা যায়। চীনের সঙ্গে যুদ্ধের সুবাদে মঙ্গোলিয়ানরা বারুদ সম্পর্কে জেনে যায়। এরপর ওরাই এর কথা ছড়িয়ে দেয় সবখানে। তারা নিজেরাও এই পাউডার প্রস্তুত করা শিখে ফেলে। পরে সিল্ক রোডের মাধ্যমে ভারতবর্ষসহ অন্যান্য দেশেও পৌঁছে যায় বারুদের ফর্মুলা।