দেহঘড়ি পর্ব-০৫২
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।
#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা
ঘাড় ব্যথার টিসিএম চিকিৎসা
ঘাড় ব্যথা একটি খুব সাধারণ সমস্যা। পৃথিবীজুড়ে এ সমস্যা বিরাজমান। এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৪ শতাংশ মানুষ এ সমস্যায় ভোগে। ঘাড় ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলে চিকিৎসকদের জন্য এর নির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা প্রায়ই বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। এমনকি অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাও সব সময় এর সঠিক কারণ বের করতে পারে না। তবে ঘাড় ব্যথার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুপযুক্ত শারীরিক ভঙ্গি, ঘুমানোর অবস্থান, ঘাড়ের অতিরিক্ত ব্যবহার, ইনজুরি থেকে ট্রমা, সার্ভিকাল ডিজেনারেটিভ ডিস্ক রোগ, সার্ভিকাল হার্নিয়েটেড ডিস্কে সমস্যা, স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস, সার্ভিকাল অস্টিওআর্থারাইটিস, সার্ভিকাল রেডিকুলোপ্যাথি, মানসিক চাপ, মায়োফেসিয়াল ব্যথা বা ফাইব্রোমায়ালজিয়া।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড় বা ঘাড়ের আশেপাশের নরম টিস্যু ও লিগামেন্টে টান বা ঘাড়ের ওপর চাপের কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়। এই ধরনের পেশীর ব্যথা কাজ করার সময় বা ঘুমানোর সময় ঘাড়ের অবস্থান থেকে বা টিস্যুতে হঠাৎ আঘাতের কারণে হতে পারে। টিস্যুতে উত্তেজনা তৈরি করে এমন দীর্ঘস্থায়ী চাপও ঘাড়ের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘাড় ব্যথার জন্য টিসিএম ও আকুপাংচার
ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে কোনও রোগী একজন আকুপাংচার চিকিৎসকের কাছে গেলে, তিনি সমস্যার বিশদ ইতিহাস জানবেন এবং উপসর্গ ও অন্তর্নিহিত কারণগুলো বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় করবেন। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমের মূল বিশ্বাস হলো শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন দেহের মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’র ভারসাম্য। টিসিএমে মনে করা হয়, ‘বাই সিন্ড্রোম’ বা ‘দ্বি-লক্ষণ’ সারা শরীরে ‘ছি’ ও রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় ‘বাই সিন্ড্রোম’ হলো রিউমাটোলজিকাল ডিসঅর্ডার। রিউম্যাটিজম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস এবং ফাইব্রোসাইটিস এই ক্যাটাগরির আওতায় পড়ে এবং এর সবগুলোই ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হওয়া এবং সার্ভিকাল জয়েন্ট ফোলার মূল কারণ হতে পারে। ধারণা করা হয়, তাপ, বায়ু, ক্লেদ ও তাপজনিত রোগজীবাণু থেকে ‘বাই সিনড্রোম’ হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্যাথোজেনিক ফ্যাক্টর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে আবার কখনও কখনও বহিরাগত উত্স থেকে আসে। বাই সিনড্রোম দেহের মধ্যকার পথে বাধা তৈরি করে, যার ফলে শক্তিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা হয়। বাই সিনড্রোমের প্রকাশ ঘটে ব্যথা, ফোলা, অসাড়তা বা জ্বালা-পোড়ার মাধ্যমে। কখনও কখনও এই লক্ষণগুলো বিশেষ করে ঘাড় এলাকায় দেখা দেয়। টিসিএম রক্ত সঞ্চালন ও ‘ছি’র মধ্যে ভারসাম্য আনা এবং বায়ু ও ক্লেদ দূর করার মধ্য দিয়ে বি সিন্ড্রোমের চিকিত্সা করে।