চলতি প্রসঙ্গ: শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে, কীভাবে চীনের এই সুযোগটি কাজে লাগাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো?
নভেম্বর ২৫: সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনের সময়, চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত সকল স্বল্পোন্নত দেশকে শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বেইজিং। চীন হল এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রথম উন্নয়নশীল দেশ এবং অন্যতম প্রধান বিশ্ব অর্থনীতি। এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সামনের ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর মধ্যে, শুল্ক কোটার পণ্যগুলো শুধুমাত্র কোটার মধ্যে শুল্কের হার কমিয়ে শূন্য করে, কোটার বাইরে শুল্কের হার অপরিবর্তিত থাকবে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য চীনে রপ্তানি সম্প্রসারণের একটি সুযোগ।
“নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে, অন্যদের প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করতে হবে, নিজেই সমৃদ্ধ হতে চাইলে, অন্যদের সমৃদ্ধ হতে সাহায্য করতে হবে।” এপেক নেতাদের ৩১তম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন এবং জি-২০ নেতাদের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়, উন্নয়ন মানব সমাজের চিরস্থায়ী বিষয়, তবে সকল দেশের অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করাই প্রকৃত উন্নয়ন। “গরিবের আরও গরিব হওয়া এবং ধনীর আরও ধনী হওয়ার ভিত্তিতে বিশ্ব সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা তৈরি করা যাবে না।” প্রেসিডেন্ট সি’র কথায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে একসাথে সমৃদ্ধ হওয়ার চীনের আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প বিশ্বের কাছে প্রকাশিত হয়েছে।
আর এই সংকল্প চীনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগে উচ্চমানের নির্মাণের জন্য হাত মেলানো, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্সে যোগদান’ এবং চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত সকল স্বল্পোন্নত দেশকে শূন্য-শুল্ক প্রদানের মতো উদ্যোগ এই সংকল্পের প্রতিফলন।
২৩শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে, চীনের সহকারী বাণিজ্য মন্ত্রী থাং ওয়েন হোং বলেছেন যে ১ ডিসেম্বর থেকে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন সকল স্বল্পোন্নত দেশের জন্য শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ব্যবস্থার পূর্ণ ব্যবহার করতে প্রাসঙ্গিক দেশগুলোর সাথে সহায়তা করবে।
চীন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে এখনো উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। শুল্ক পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে মোট আমদানি ও রপ্তানির বাণিজ্য পরিমাণ ছিল ৭৪.৯ বিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.২% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মধ্যে, চীনের রপ্তানি ছিল ৭১.৬ বিলিয়ন ইউয়ান, গত বছরের তুলনায় ০.৭% কমেছে। চীনের আমদানি ৩.৩ বিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ২৩.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সাধারণত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রেখেছে। গত দশ বছরে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে ২.১৮ গুণ, যার মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ২.২৩ গুণ এবং আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১.৫৪ গুণ।
বাংলাদেশ থেকে চীনের আমদানি বৃদ্ধি, বিশেষ করে বৃহত্তর বাণিজ্যিক পরিবেশ বিবেচনা করলে, বাংলাদেশী পণ্যের প্রতি চীনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা নির্দেশ করে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ভালো প্রবণতা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন চীনে রপ্তানি আরও সম্প্রসারণের সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনা বাজারের চাহিদা আরও বোঝা উচিত। যার ফলে বাংলাদেশের পণ্য প্রচারের পদ্ধতি এবং নিজস্ব সরবরাহ চেইনকে আরো উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করা যায়। একই সময়ে, বাংলাদেশী পণ্যের প্রদর্শনের সুযোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যায়। যাতে আরও বেশি চীনা ব্যবসায়ী বা গ্রাহক বাংলাদেশী পণ্যের বৈচিত্র্য বুঝতে পারেন। তাছাড়া দামের সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশী পণ্য অবশ্যই চীনের বৃহৎ বাজারে আরও বেশি অংশ দখল করতে পারবে।
আশা করা যায়, চীনের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগের সুযোগ বাংলাদেশসহ আরও বেশি দেশের কাছে পৌঁছবে। আসুন আমরা অশান্ত বিশ্বে আরও নিশ্চয়তা আনতে একসাথে কাজ করি এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য আরো শক্তি যোগাই।