বাংলা

চীনের ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’ প্রসঙ্গ

CMGPublished: 2024-11-12 16:50:23
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

ঘুম থেকে উঠে উড়ন্ত ট্যাক্সিতে চড়ে সরাসরি বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়া। ড্রোনের মাধ্যমে টেক আউট পরিবহন করা। গরম বাতাসের বেলুনে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা। এ সবই সাধারণ জীবনে ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’ র প্রয়োগ।

ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ মিটার উপর দিয়ে ড্রোন বা উড়ন্ত বাহনের মাধ্যমে মালামাল ও মানুষ পরিবহনের অর্থনীতিই ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন এই ধরণের অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট উত্পাদন শিল্পের জন্য নীতিমালা চালু করেছে। চীনের ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’ শিল্প অন্বেষণ থেকে দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

২০২৪ সালে চীনের কম উচ্চতার অর্থনীতি সরকারি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’র প্রয়োগে বুদ্ধিমান শহরের নির্মাণ ও বুদ্ধিমান পরিবহনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে; এমনকি, নিত্যদিনের জীবনেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শাংহাই পর্যটকরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হুয়াংফু নদী ও শাংহাইয়ের বাণিজ্যকেন্দ্র লুচিয়াচিয়ুর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারছেন।

নিউস্কাই হেলিকপ্টার কোম্পানির ক্যাপ্টেন ওয়াংলিং বলেন,

“এটি শাংহাই হুয়াংফু নদীর উপরে কম উচ্চতা সাংস্কৃতিক পর্যটন প্রকল্প। এই রুটের শুরু লুংহুয়া বিমানবন্দর। এর মোট দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। মোট সময় লাগে ১০ মিনিট। আমরা আকাশ থেকে ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ারসহ শাংহাইয়ের তিনটি ল্যান্ডমার্ক ভবন দেখতে পারি।”

‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’-সংশ্লিষ্ট বিমানগুলোর মধ্যে, ড্রোন চীনে প্রধান স্থানে রয়েছে। চীনের ড্রোনশিল্পের মান বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। চীনের বেসামরিক ড্রোন বিশ্ববাজারের ৭০ শতাংশ দখল করে আছে। এখন পর্যন্ত চীন মোট ২০টি বেসামরিক মানববিহীন বিমান চালনার বেস টেস্ট এলাকার নাম প্রকাশ করেছে।

ড্রোন ছাড়াও, কম উচ্চতা বিমানের আরেকটি উদ্ভাবন হল ইভটল। সম্প্রতি সপ্তম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা সিআইআইই-এর একাধিক বুথে ইভটল প্রোটোটাইপগুলো ‘ভবিষ্যতের ভ্রমণের’ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সিআইআইই-র সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী পণ্য হিসেবে, ভারট্যাক্সি কোম্পানি প্রদর্শিত এম১-চালিত বাস্তব বিমান বিশ্বের সামনে প্রথম প্রকাশ করা হয়। ফলে কোম্পানিটি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়।

এই বিমানটি এবারের সিআইআইইতে সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী বস্তু, যার মোট দৈর্ঘ্য ১০ মিটার এবং এর ১৫ মিটার প্রশস্ত ডানা রয়েছে। এটি বৈদ্যুতিক শক্তিতে চালিত যান। এর উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য রানওয়ের প্রয়োজন হয় না। এটি মাত্র একবার চার্জে ২৫০ কিলোমিটার উড়তে পারে এবং প্রতি ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ইভটল বৈদ্যুতিক ড্রাইভ ও বিতরণ করা পাওয়ার সিস্টেম ব্যবহার করে, যা এর যান্ত্রিক কাঠামোকে খুব সহজ করে তোলে। ফলে এর উত্পাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদন করা হলে, এর ব্যয় হেলিকপ্টারের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ধরনের খরচ মূল্যের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে উড়ন্ত ট্যাক্সিতে চড়া সবার জন্য সহজতর হবে।

ষষ্ঠ সিআইআইইতে, এই কোম্পানিটি ছিল একমাত্র কম উচ্চতার অর্থনীতির প্রদর্শক। কিন্তু সপ্তম সিআইআইইতে কম উচ্চতা অর্থনীতি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভলেনট কোম্পানি ১৬৫টিরও বেশি অর্ডার পেয়েছে, যার অর্থমূল্য ৩৫ কোটি ইউয়ানের বেশি। ফুইন ফাইন্যান্সিয়াল লিজিংয়ের সাথে ভার্টিক্স কোম্পানি একটি কৌশলগত সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে।

চীনা বাজারের পাশাপাশি, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলগুলোতে ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’র চাহিদাও বিবেচ্য। সম্প্রতি, শাংহাই টিক্যাপ টেকনোলজি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানিগুলো একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মোদ্দাকথা, ‘কম উচ্চতা অর্থনীতি’ ক্রমশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn