ক্যান্টন মেলার ৬০ বছরের ইতিহাস এবং এর আকর্ষণীয় ক্ষমতা প্রসঙ্গ
১৩৬তম চীন আমদানি ও রপ্তানি মেলা তথা ক্যান্টন মেলা সম্প্রতি চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে উদ্বোধন হয়। ক্যান্টন মেলা শুরু হয় ১৫ অক্টোবর, চলবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। তিন সপ্তাহের এই মেলার আয়োজন করা হয় অফলাইন ও অনলাইনে। বিপুলসংখ্যক নতুন কোম্পানি, নতুন পণ্য, ও নতুন প্রযুক্তি মেলা প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে।
এবারের ক্যান্টন মেলার প্রদর্শনীস্থলের মোট আয়তন ১৫ কোটি ৫০ লাখ বর্গমিটার। এতে আছে মোট ৭৪ হাজার বুথ, ৫৫টি প্রদর্শনী-এলাকা, ও ১৭১টি বিশেষ এলাকা। ৩০ হাজারেরও বেশি কোম্পানি অফলাইন প্রদর্শক হিসেবে মেলায় অংশগ্রহণ করছে। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের "উইন্ড ভেন" এবং "ব্যারোমিটার" হিসাবে, ৬০ বছরেরও বেশি ইতিহাসের এই প্রদর্শনী চীনা উত্পাদন, চীনা পণ্য ও চীনা ব্র্যান্ডের অনন্য আকর্ষণকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে আসছে।
ক্যান্টন মেলা প্রধানত চীনের বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও পণ্য প্রদর্শনের প্লাটফর্ম। মেলার ১১ সহস্রাধিক বুথ "লিটল জায়ান্ট" কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে। এ সব কোম্পানি অনন্য ও উদ্ভাবনী উত্পাদনে শ্রেষ্ঠ এবং জাতীয় স্তরের উচ্চ-প্রযুক্তি উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আধুনিক প্রযুক্তি, উপকরণ, প্রক্রিয়া, ও ধারণাসম্বলিত পণ্যের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। এবারও মেলায় চীনের উচ্চ-মানসম্পন্ন সবুজ প্রযুক্তির প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ক্যান্টন মেলা বিশ্বের ১০৪টি দেশ ও অঞ্চলের ২০০টিরও বেশি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছে। এবারের প্রদর্শনীর কার্যক্রমে উপস্থিত বিদেশী ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের মধ্যে ডেট্রয়েট চায়না বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন, মেক্সিকো-চীন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এবং ব্রাজিল-চীন চেম্বার অফ কমার্স অন্তর্ভুক্ত আছে।
১৯৫৯ সালের পর থেকে ক্যান্টন মেলা ৬০টিরও বেশি বছর অতিক্রম করেছে। কেন এতো দীর্ঘ সময় ধরে ক্যান্টন মেলা বিদেশী প্রদর্শক ও ক্রেতাদের কাছে নিজের আকর্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে? উদ্ভাবন ছাড়াও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, পরিষেবা। ক্যান্টন মেলা অগ্রিম পারমিট আবেদন, দূরবর্তী পারমিট আবেদন, এবং ২৪-ঘন্টা পারমিট আবেদনের সুবিধা প্রদান করে। প্রদর্শক এবং বণিকরা শুধু প্রদর্শনী হলেই পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন না, বরং প্লেন, ট্রেন, জাহাজ থেকে নামার বা হোটেলে পৌঁছানোর সাথে সাথেই আবেদন করতে পারেন। প্রদর্শনী হলের সবখানে ব্যাংক শাখা, এটিএম মেশিন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় মেশিন এবং বৈদেশিক মুদ্রার পিওএস মেশিন আছে, যা বিদেশী প্রদর্শকদের জন্য সুবিধাজনক। পাশাপাশি, কুয়াচৌ শহরে দক্ষ ও সূক্ষ্ম "ক্যান্টোনিজ-স্টাইল পরিষেবা"-ও দেখা যায়। যেমন, ক্যান্টন মেলা ব্যবসায়ীদের জন্য পাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সীমান্ত পরিদর্শনের জন্য এক্সপ্রেস কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও বিশেষ লেন, পাতাল রেল ও প্রদর্শনী হলের মধ্য দিয়ে যাতায়াতকারী পর্যাপ্ত বাসলাইন আছে। কুয়াংচৌ আন্তর্জাতিক কেনাকাটা উত্সব, সূক্ষ্ম খাদ্য উত্সব, এবং কফি সংস্কৃতি উত্সবের মতো একাধিক কার্যক্রমও আছে।
বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকাজের গতি মন্থর, কিন্তু চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য এখনও শক্তিশালী ও গতিশীল। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের মোট আমদানি ও রপ্তানির মূল্য ৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের রেকর্ড ভেঙেছে এবং প্রতিটি প্রান্তিকে ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে, ক্যান্টন মেলার মতো প্লাটফর্মগুলো চীনের সাথে বিদেশী বাণিজ্যিক অংশীদারদের পারস্পরিক যোগাযোগের ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।