বাংলা

চলতি প্রসঙ্গ: ভারত-চীন সীমান্ত টহল চুক্তি; অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনরুদ্ধারের আশা

CMGPublished: 2024-10-29 15:29:41
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

অক্টোবর ২৯: চার বছরের সীমান্ত-উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে স্থবিরতার পর, ভারত ও চীন অবশেষে হিমালয়ের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ লাইন (এলওসি) বরাবর টহলব্যবস্থা বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিটি কেবল সীমান্ত-সংঘাত নিরসনে আশার সঞ্চার করেনি, বরং দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় নতুন প্রাণশক্তিও সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথেও এটি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

‘সীমান্তের উত্তেজনা দীর্ঘকাল ধরেই দুই দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সীমিত বিনিময় এবং কঠোর ভিসানীতি সমৃদ্ধ আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম করেছে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নফিসুল কিউ জিলানী এ সংকটের একজন ভুক্তভোগী। তিনি ম্যান্ডারিন ভাষা জানা একজন উদ্যোক্তা, যার প্রদর্শনী সংস্থা ভারতে ট্রেড শো-তে চীনা কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করে সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি, অন্য অনেকের মতো, ভিসা বিধিনিষেধ ও কূটনৈতিক স্থবিরতার শিকার। তার ব্যবসায বলতে গেলে পঙ্গু হয়ে গেছে। চীনে চা রফতানি করেন জিতেন্দার চান্দাক। ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতিতে তিনি ও তার ব্যবসা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মিস্টার জিলানির মতো তাঁর ব্যবসাও ভিসা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মিস্টার চান্দাক ভারতে যেসব চীনা কোম্পানিকে সাহায্য করতেন, সেগুলোতেও শ্রমিক ছাটাই হয়। বস্তুত, দু’দেশের সীমান্ত-সংঘাতের কারণে সৃষ্ট জটিলতার শিকার হয় এমন অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা।’

সীমান্তে টহল চুক্তি স্বাক্ষর এ ধরনের সমস্যা সমাধানের পথে একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য হতে পারে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিনিময় ধীরে ধীরে পুনরায় বাড়তে শুরু করবে এবং ভিসানীতিও শিথিল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে জিলানি ও চান্দাকের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় ইতিবাচক সংবাদ। তাঁরা এখন কেবল তাদের ব্যবসা পুনরায় চালু করার সুযোগ পাবেন, তা নয়, বরং চীনা অংশীদারদের সাথে নিজেদের সম্পর্ক জোরদার করার সুযোগও তাঁরা পাবেন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে। ভারত ও চীনের অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক এবং দু’পক্ষের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন উত্পাদন ও পরিষেবা খাতে বিস্তৃত সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। ভারতের সামর্থ্য ও চীনের উত্পাদন-ক্ষমতার সংমিশ্রণ, সাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্মাণে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত-চীন চেম্বার অফ কমার্সের চেয়ারপারসন নরেশ গুপ্ত আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন যে, টহল চুক্তি কেবল বিদ্যমান উত্তেজনা হ্রাস করবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত করবে। তিনি ভারতীয় ও চীনা সংস্থাগুলোর একসাথে কাজ করার এবং একসাথে বিকাশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন, যা ভারতে প্রযুক্তি প্রয়োগের স্তর বাড়াতে, পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে, এবং ব্র্যান্ড প্রচারকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।’

সীমান্ত ইস্যুর সমাধান দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিককরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ—এই সত্যও আমাদের ভুললে চলবে না। ওয়াশিংটন ডিসির একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, চুক্তিটি তাত্পর্যপূর্ণ, তবে এর ইতিবাচক দিককে বাড়িয়ে দেখার সুযোগ নেই। "এটি সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটায়নি," মিঃ কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেন। "এই চুক্তি লাদাখকে তার সঙ্কট-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে," মিঃ কুগেলম্যান বলেন, "এটি লাদাখ সঙ্কটের সময় যে অঞ্চলগুলোকে জড়ো করা হয়েছিল, সেগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় না। সে কারণেই আমাদের এই নতুন চুক্তি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া দরকার।"

চীন ও ভারতের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতা অর্জনের জন্য, অনেক ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও যোগাযোগ ও পরামর্শ প্রয়োজন। তবে যাই হোক না কেন, টহল চুক্তি স্বাক্ষর দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আমাদের বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, দু’পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় ভারত ও চীন আরও সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যত তৈরি করতে সক্ষম হবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn