বাংলা

‘ব্রিক্স’ সহযোগিতা ও ‘বৈশ্বিক দক্ষিণ’

CMGPublished: 2024-10-28 10:58:14
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

অক্টোবর ২৫: সম্প্রতি ব্রিক্স-এর ১৬তম শীর্ষসম্মেলন রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ব্রিক্স-এর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির পর সংস্থাটির প্রথম শীর্ষসম্মেলন। এর আগে, গত জানুয়ারিতে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ইথিওপিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিক্সে যোগ দেয়। ফলে, ব্রিক্স সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দশটিতে।

জটিল ও পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, ব্রিক্স নতুন অর্থনৈতিক সত্তা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং সংস্থার কাঠামোতে বিভিন্ন সহযোগিতা ফলপ্রসূও হয়েছে। এখন ব্রিক্স পরিবার বড় হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, ‘গ্লোবাল সাউথ’ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের জন্য গ্রেটার ব্রিক্স আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ব্রিক্সভুক্ত দশটি দেশ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্বের বাণিজ্যের এক-পঞ্চমাংশের অংশীদার। ক্রয়ক্ষমতার দিক দিয়ে ব্রিক্স জি-সেভেনকেও ছাড়িয়ে গেছে। ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বৈশ্বিক জিডিপি-তে ‘গ্রেটার ব্রিক্স’-এর অবদান ৩১.৬ থেকে ৩৫.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের অপরিশোধিত তেল রপ্তানিতে ব্রিক্স সদস্যদেশগুলোর শেয়ার ১৫ থেকে বেড়ে ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছর চীন অব্যাহতভাবে ব্রিক্স সদস্যদেশগুলোর সাথে সহযোগিতা আরও উন্নত করেছে। চীনা সাধারণ শুল্ক বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রথম তিন প্রান্তিকের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুসারে, ব্রিক্স দেশগুলো বিশ্ব বাণিজ্যের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশির অংশীদার এবং সদস্যদেশগুলোতে চীনের আমদানি ও রপ্তানি ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বের সকল দক্ষিণের দেশ ব্রিক্স-কে সুযোগ হিসেবে দেখছে। যেমন, বাংলাদেশ ব্রিক্সে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্রিক্সের সদস্যদেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। চীন টানা ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বৃহত্তম আমদানি উত্সদেশ। ২০২৩ সালে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬৫৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২২ সালের চেয়ে ৩৬.১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, আগামী পয়লা ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের ১০০ শতাংশ পণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন।

বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ও শক্তির ভারসাম্য সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। একদিকে নতুন বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৭ সালে ব্রিক্স দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতির ৩৭.৬ শতাংশের অংশীদার হবে। অন্যদিকে, জি-সেভেন-কে প্রতিনিধিত্ব করা উন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্যবাদী আচরণ, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এবারের শীর্ষসম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রিক্স-কে পাঁচটি নামে ডেকেছেন: শান্তির ব্রিক্স, উদ্ভাবনের ব্রিক্স, সবুজ ব্রিক্স, ন্যায়ের ব্রিক্স, ও সাংস্কৃতিক ব্রিক্স। তাঁর বক্তব্যে ব্রিক্সের সদস্যদেশগুলোর শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা, ও অভিন্ন কল্যাণ অর্জনের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে। আর এগুলো হচ্ছে ব্রিক্স দেশগুলোর সহযোগিতা-ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক নীতি। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্রিক্স দেশগুলো সংস্কার ও উচ্চ মানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।

বস্তুত, বৈশ্বিক ব্যবস্থায় সংস্কার এবং প্রকৃত বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়ন করা জরুরি। চীন ব্রিক্স দেশগুলোকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা উন্নত করতে, প্রকৃত বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়ন করতে, এবং আরও ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn