মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: শিশির আপনি কতবার সিনচিয়াং সফর করেছেন? সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে?
শিশির:আমি তিনবার সিনচিয়াং সফর করেছি। আসলে সেটি খুব বড় একটি প্রদেশ। চীনের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ এবং ব্রিটেনের চেয়ে ১৮ গুণ বড় সিনচিয়াং।
অনেকেই সিনচিয়াং সম্পর্কে আগ্রহী। বিশেষ করে, আমাদের বিদেশি বন্ধুরা। পশ্চিমা তথ্যমাধ্যমে তাঁরা সিনচিয়াং নিয়ে অনেক খবর পড়েছেন। জোরপূর্বক শ্রম, গণহত্যা, মুসলিমদের নির্যাতনের মিথ্যা বর্ণনায় এসব খবরে ভরপুর পশ্চিমা মিডিয়া। মাঝে মাঝে ফেসবুকে অনেক বাংলাদেশি বন্ধু সিনচিয়াংয়ের মুসলমানদের খোঁজ-খবর জানতে চান। আমি তাঁদেরকে বার বার প্রকৃত সত্য জানানোর চেষ্টা করি। সিনচিয়াংয়ে সবাই ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করেন, তা আমি সবাইকে জানাই।
সিনচিয়াংয়ে সাড়ে ২৫ হাজারের বেশি মসজিদ আছে। সেখানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন প্রায় ২৯ হাজার জন।
আমি উরুমুছি, ইলি, কাশগারসহ নানা শহরের স্থানীয় মসজিদে গিয়েছি। সেখানে বিদ্যুত্, পাঠাগার, সুপেয় পানি, অজুখানা, টয়লেট, ইন্টারনেট, এসি, হিটার, এবং টিভিসহ আধুনিক সব সুবিধাই রয়েছে। যে কোন সময়ে ইসলাম ধর্মের মানুষ সেখানে নামাজ পড়তে পারেন।
শেষবার সফরে আমি একজন ইমামের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি স্থানীয় মুসলমানদের অবস্থা আমাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খাবার, উত্সব, বিয়ে ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানসহ ইসলামি ঐতিহ্যের সবকিছু মসজিদে হয়ে থাকে।
আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনারা একবার সিনচিয়াংয়ে আসেন, তাহলে বারবার আসতে চাইবেন। কারণ, এটি আকর্ষণীয় ও বৈশিষ্ট্যময় একটি জায়গা।
প্রশ্ন: দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন উদ্যোগে গণতন্ত্র বিষয়ক একটি সম্মেলন হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে সিউলেই প্রতিবাদ হচ্ছে। কিছুদিন আগে সিজিটিএন একটি জরিপে প্রকাশ করেছে যে, বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ মনে করে মার্কিন গণতন্ত্র আসলে বিশ্বের অনেক দেশে শুধু গোলোযোগ সৃষ্টি করে। তো এই প্রসঙ্গে আপনি কি কিছু বলবেন?
শিশির:গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলনে অবশ্যই গণতন্ত্রের কথা বলা উচিত্। গণতন্ত্র শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে। যার অর্থ- সার্বভৌমত্ব জনগণের হাতে, জনগণের দ্বারা শাসন। পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে গণতন্ত্রের যে কোন উন্নয়ন হল, মানবসভ্যতার অগ্রগতি এবং যা আমাদের অভিন্ন প্রত্যাশা। গণতন্ত্রের কোনো দোষ নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র ভুল করে গণতন্ত্রকে নিজের আধিপত্য রক্ষার উপকরণ হিসেবে মনে করছে। তাদের মতে গণতন্ত্র শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের এবং শুধু তারাই গণতন্ত্রের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে পারে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী গণতন্ত্রের উন্নয়ন করা উচিত্। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্র সবার পক্ষ থেকে নিজেই জোর করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা গণতন্ত্রকে নিজের মতো করে সংজ্ঞায়িত করে! এমন আচরণই তো অগণতান্ত্রিক!
গণতন্ত্র হল আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ। তবে বিশ্বে নিখুঁত কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। সব দেশের জন্য উপযোগী- একক গণতান্ত্রিক ধারণা ও ব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যাই হোক-না-কেন, নিজ দেশের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই গণতন্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন: পশ্চিমা বিশ্ব অনেক সময় বলে যে, চীনে নাকি গণতন্ত্র নেই। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি কি বলবেন যে, চীনের গণতন্ত্র ঠিক কেমন?
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবার বলেছিলেন, একটি দেশে কি গণতন্ত্র আছে? তা সেদেশের জনগণই বলতে পারে। শুরু থেকেই গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হল- জনগণই হলো প্রভুর মতো। চীনে বলা হয়, শত ফুল ফুটতে দাও- যা ফুলের বৈচিত্র্য। গণতন্ত্রের বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে মানবিক রাজনৈতিক সভ্যতা উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ওপর। প্রতিটি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও তার উন্নয়নে রয়েছে সেসব জাতির ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য।
শিশির:আমি একটি উদাহরণ দেই। ওয়াং ইউং চেং অল্প বয়সে একটি দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারান। ২০২৩ সালে তিনি চীনের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা জাতীয় গণকংগ্রেস-এনপিসি’র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমে দেশের প্রথম ও একমাত্র দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী এনিপিসি প্রতিনিধি হবার গৌরব লাভ করেন ওয়াং। এ বছরের বার্ষিক রাজনৈতিক সভায়, তিনি সরকারি কাজের প্রতিবেদনের একটি ব্রেইল সংস্করণ পান। উচ্ছ্বসিত ওয়াং বলেন, “এটিই বাস্তব গণতন্ত্র যা একজন অন্ধ ব্যক্তিও স্পর্শ করতে পারে।” প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, “গণতন্ত্র প্রদর্শনের অলঙ্কার নয়, বরং জনগণের সমস্যা সমাধানের একটি হাতিয়ার।” চীনে অবশ্যই গণতন্ত্র রয়েছে। তবে সেটি পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধারণার মতো নয়। চীনের গণতন্ত্র চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। চীনে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। দারিদ্র দূর করা হয়েছে। শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে। তরুণদের কর্মসংস্থান রয়েছে, সিনিয়র সিটিজনরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে। এটাই চীনের গণতন্ত্র।