বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে শিল্পের উন্নয়ন: নতুন মানের উত্পাদন শক্তি
আমরা যদি মানবজাতির ইতিহাসের দিকে একটু ফিরে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারি যে একটি দেশ, একটি জাতির উন্নয়নের বাস্তবায়নে সবসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের উপর নির্ভর করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে প্রথম উত্পাদন শক্তি হিসেবে মনে করি। সম্প্রতি চীনে প্রচলিত আছে নতুন একটি শব্দ, তা হল নতুন মানের উত্পাদন শক্তি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত বছরে হেই লং চিয়াং প্রদেশে পরিদর্শনকালে প্রথম বারের মতো এ শব্দ উল্লেখ করেন এবং সম্প্রতি প্রকাশিত চীনের প্রাদেশিক সরকারি বার্ষিক কর্মপ্রতিবেদনে এ শব্দও অনেক বার উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে নতুন মানের উত্পাদন শক্তি মানে কী, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক রয়েছে?
শুরুতে একটি কথা, নতুন মানের উত্পাদন শক্তি
মানে বিশাল সম্ভাবনাযুক্ত এমন মৌলিক বিজ্ঞান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। তার মানে এমন প্রযুক্তি আমাদের উত্পাদনের পদ্ধতি জীবিযাপনের পদ্ধতি এবং চিন্তাভাবনা পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করে এবং অর্থনীতি ও সমাজে গভীর ও স্থায়ী সংস্কার সাধন করে।
এই কথাগুলো বোঝা কী একটু কঠিন? তাহলে, কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। শুরুতে কিছু শিল্পে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে নতুন মানের উত্পাদন শক্তি বলে অভিহিত করা হয়। যেমন নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি, নতুন উপাদান, উচ্চ পর্যায়ের সরঞ্জাম, নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি, পরিবেশ সংরক্ষণ, বেসামরিক বিমান চলাচল, জাহাজ নির্মাণ এবং সামুদ্রিক প্রকৌশল সরঞ্জাম ইত্যাদি। এর মধ্যে নতুন জ্বালানি ও নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি এ দুটি শিল্পে চীন বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে।
তারপর নতুন মানের উত্পাদন শক্তি মানে ‘শূন্য থেকে এক’ এমন কিছু বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন। এক ধরনের প্রযুক্তি হঠাৎ করে আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে এমন প্রযুক্তি নতুন মানের উত্পাদন শক্তি হতে পারে। যেমন ১৯৯৩ সালে স্মার্টফোন এসে আমাদেরকে মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে নিয়ে এসেছে। ৩০ বছরের আগে আমরা কখনও কল্পনা করতে পারিনি যে নগদ ছাড়া সব কেনাকাটা করা যায় আর এখন তা শুধু বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে তা নয়, বরং আমাদের একটি জীবনযাপনে অভ্যস্ত করেছে।
আর তৃতীয়ত, কিছু শিল্পে আসছে ব্যবসার নতুন ফরম্যাট। স্মার্ট গাড়ির একটি উদাহরণ দেই। আগে আমরা যখন নতুন একটি স্মার্ট গাড়ি বাজারে আনি, তখন এটিকে সবদিক থেকে, সবচেয়ে ভাল করতে হয়। তবে টেসলা আমাদেরকে নতুন একটি ব্যবসার ফরম্যাট দেখায়। তারা শুরুতে কম নিখুঁত পণ্য বাজারে দেয় তারপর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফিডব্যাক সংগ্রহ করা হয়। তারপর দ্রুত তাদের মত অনুযায়ী গাড়ির সমন্বয় করে। এতে স্মার্টগাড়ি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয় এবং পণ্যগুলো ক্লায়েন্টের চাহিদা আরও ভালাভাবে মেটায়।
যেহেতু নতুন মানের উত্পাদন শক্তি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে চীন সরকার এর উপর বেশ গুরুত্ব দেয়। চীনের মৈলিক গবেষণার বাজেট ২০১২ সালের ৪ হাজার ৯৯০ কোটি ইউয়ান থেকে ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ২৩৫ কোটি ইউয়ানে। ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার ২০২৩ বিশ্ব উদ্ভাবন সূচক প্রতিবেদনে চীন ১২তম স্থানে রয়েছে। চীনও প্রথম ৩০টি দেশের মধ্যে একমাত্র মাঝারি আয়ের অর্থনৈতিক সত্তা।
আর শেষ প্রশ্ন, নতুন মানের উত্পাদন শক্তির সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী সম্পর্ক রয়েছে?
সহজে বলি, নতুন মানের উত্পাদন শক্তির উন্নয়নে কোম্পানির আয়, অর্থনীতি বৃদ্ধি হতে পারে। যেমন এআই শিল্পের এখন দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছ আর এআইকে আর সঠিক নির্দেশনা দিতে চাইলে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। যারা ভাষার অভিব্যক্তি, চাহিদা বিশ্লেষণ এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিংসহ জানতে হবে। তাই নতুন এক চাকরিও হাজির হয়, তা হল বড় মডেল অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিবেদন অনুযায়ী এআই সংশ্লিষ্ট চাকরির বেতন প্রতি মাসে ৬০ হাজার ইউয়ান হতে পারে।
অন্য দিকে, নতুন প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করতে পারে। যেমন ড্রোন ভবিষ্যতে আমাদেরকে প্যাকেজ ও খাবার ডিলিভারি করতে পারে। উচুঁতে উদ্ধার এবং অগ্নিনির্বাপণ কাজে অংশ নিতে পারে ড্রোন। নতুন মানের উত্পাদন শক্তি আমাদেরকে অনেক সম্ভবনা ও ভবিষ্যত দেখাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশ্ব অর্থনীতি বৃদ্ধির ইঞ্জিন
সবসময় নতুন প্রযুক্তি ও শিল্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে যেমন রয়েছে শাক্তিশালি শক্তি তেমন রয়েছে বিশ্বের ভবিষ্যত।