বাংলা

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ পরিস্থিতি অবনতি করছে

CMGPublished: 2024-02-06 14:26:34
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সম্প্রতি ইয়েমেনের রাজধানী সানা-সহ ১০টিরও বেশি স্থানে হুথি গোষ্ঠীর সশস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকে তথাকথিত "ইরান-সমর্থিত" সশস্ত্র গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। যার ফলে কয়েক ডজন মানুষ হতাহত হয়। আঞ্চলিক উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করার জন্য গিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যখন তার বিরোধীদের শক্তি দিয়ে দমন করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ‘আগুন জ্বালায়’, তখন এটি তার নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গাজা উপত্যকায় ‘কূটনৈতিকভাবে আগুন নিভানোর’ চেষ্টা করে। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী এবং বিভাজনমূলক নীতি মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হবে, উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত অস্থিতিশীল অবস্থায়’ ঠেলে দেবে।

শাংহাই বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণাগারের অধ্যাপক ডিং লং উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধের তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে প্রতিরোধ অর্জনের নীতি গ্রহণ করছে। নিংসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিউ সিনছুন বিশ্বাস করেন যে, এই বিমান হামলার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর দুটি বিবেচনা রয়েছে: প্রথমত, মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং কর্মীদের উপর আরেকটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ইরাক ও ইরানের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে নিবৃত্ত করা; দ্বিতীয়ত, ইরাক ও ইরানের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে নিবৃত্ত করতে ইরানের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আক্রমণ এবং ইরানের সাথে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো।

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে, বিশ্লেষকরা মনে করেন যে মার্কিন সামরিক বাহিনী আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ নেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান সরাসরি সংঘর্ষে জড়াবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২রা ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্যান্য অংশে সংঘাত সৃষ্টি করার পরিবর্তে "যারা আমেরিকানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে" তাদের জবাব দেওয়া।

এ বছরের শুরুতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের স্পিলওভার প্রভাব তীব্রতর হয়েছে। একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিপক্ষকে শক্তি দিয়ে নিবৃত্ত করতে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক জায়গায় "আগুন জ্বালাচ্ছে"; অন্যদিকে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে নিজের জন্য "আগুন নিভানোর" চেষ্টা করছে। এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করতে আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এটি মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব ও বিভাজন প্রতিফলিত করে। এই নীতি শুধুমাত্র ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বর্তমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হবে না, বরং আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ব্লিনকেনের পঞ্চম সফরের বিষয়ে, বেইজিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক লিউ সিনলু উল্লেখ করেছেন যে, যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ তার মিত্রদের সন্তুষ্ট করা।

তবে বিষয়টা হচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা ও সংকট সমাধানের জন্য, বর্তমান বিশৃঙ্খলার ধারার মূলে ফিরে যেতে হবে- ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি সমস্যা সমাধান সবচেয়ে জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোকে "দুই-রাষ্ট্র সমাধান" প্রচারের জন্য ব্যবহারিক চেষ্টা করতে হবে, অন্যথায় এই অঞ্চলকে অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn