বাংলা

যে কারণে ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রশংসা করেন

CMGPublished: 2023-12-25 16:26:07
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সম্প্রতি, বাংলাদেশি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস (সিএ)’র প্রকাশিত 'বাংলাদেশে চীনের জাতীয় চিত্র' শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, ৯০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি ভালো এবং এর মধ্যে "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের আওতাধীন সহযোগিতা বাংলাদেশে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার, উন্নয়ন অংশীদার এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের উৎস হিসেবে, চীনের মর্যাদা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি চীনে ভ্রমণ, অধ্যয়ন এবং ব্যবসা করার আশা রাখেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, একাধিক ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং প্রশংসিত।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার স্বীকৃতি দেন ও প্রশংসা করেন? পুরনো বছর বিদায় এবং নতুনকে স্বাগত জানানোর এই মুহূর্তে অতীতে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার অর্জনগুলো পর্যালোচনা করলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। বিদায়ী ২০২৩ সাল হলো "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের ১০তম বার্ষিক। এই বছরে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প চালু হয়, যার ফলে ঢাকা থেকে যশোর ভ্রমণের সময় ১০ ঘন্টা থেকে কমে ২ ঘন্টা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১.৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অনুমান করা হয়। মানুষ এটিকে স্নেহের সাথে "ড্রিম রোড" বলে। এদিকে, দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু হওয়ায়, আশেপাশের এলাকার ৫০ লাখের বেশি লোক উপকৃত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম একক পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার। কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের ফলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে শিল্প উদ্যান পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে যেতে এখন চার ঘণ্টার স্থলে ২০ মিনিট লাগে, যা স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে এবং বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ জোরদার করেছে। ঘোড়াশাল পলাশ সার কারখানা প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম সবুজ সার প্ল্যান্ট, যা কার্বন ডাই অক্সাইড পুনর্ব্যবহার করতে পারে। এ প্ল্যান্টে বাষিক ৫ লাখ টন সিন্থেটিক অ্যামোনিয়া এবং ৮০ লাখ টন দানাদার ইউরিয়া উত্পাদন করতে পারে, যা বাংলাদেশের সার আমদানি কমাতে এবং আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বেসিক নেটওয়ার্ক প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর মতো যুগান্তকারী প্রকল্পগুলোও সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ বেশকিছু নতুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। জনগণের জন্য কল্যাণকর আরও বেশিসংখ্যক "বেল্ট অ্যান্ড রোড" সহযোগিতা প্রকল্প ক্রমাগতভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং একের পর এক বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কথায়, "চীন একজন সত্যিকারের বন্ধু এবং ভালো বন্ধু যে বাংলাদেশকে উন্নয়নে সহায়তা করে। 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' সহযোগিতা প্রকল্প বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য একটি ঐতিহাসিক অলৌকিক ঘটনা তৈরি করেছে।" এটি অগণিত মানুষের আশা-আকাঙ্খার কথা। সে সব প্রকল্প স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বাস্তব সুবিধা ও উপকারিতা সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ, যে "বেল্ট অ্যান্ড রোড" সহযোগিতা উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে। গত সাত বছরে, "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের আওতাধীন সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার উত্তপ্ত ভূমি "সোনালী বঙ্গোপসাগর"-এ শিকড় গেড়েছে এবং প্রস্ফুটিত হয়েছে। ধারাবাহিক সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির উন্নতিতে দারুণ অবদান রেখেছে এবং জনগণের জীবিকা ও বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ অবকাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনা কোম্পানিগুলো এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে ২৭টি প্রকল্প নির্মাণে জড়িত এবং ১২টি রাস্তা, ২১টি সেতু এবং ৭টি রেলপথ নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য প্রায় ৫.৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশের জন্য বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে।

মাস্টারকার্ড ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের (এমইআই) বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী বছর ৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার বলেছিলেন যে, "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের আওতাধীন যৌথনির্মাণ বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

আশা করা যায়, বাংলাদেশের "সোনার বাংলা"-র স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে চীন সবসময়ই তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার থাকবে। "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের কৌশলের গভীরভাবে একীকরণের সাথে, দুই দেশ উন্নত অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি ভাগ করে নেবে এবং উন্নয়ন ও বাজারের সুযোগ ভাগ করে নেবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn