কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি-সম্মেলন এবং চীনের কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন
ডিসেম্বর ২০: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের কাজকে এগিয়ে নেওয়ার মহা-পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এতে প্রথমবারের মতো দ্রুততার সাথে কৃষিতে শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলার কথা বলা হয়। কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন এবং সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের কাজকে এগিয়ে নেওয়াসহ প্রেসিডেন্ট সি’র ধারাবাহিক নির্দেশনা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এসব নির্দেশনায় নতুন সময়পর্বে ‘কৃষি, গ্রাম ও কৃষক’-সংশ্লিষ্ট কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
“১৯৮৩ সালে, কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর নথিতে ‘চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক কৃষি উন্নয়নের পথ গ্রহণ করার’ প্রস্তাব করা হয়। ২০০৭ সালে সিপিসি’র ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস ‘চীনের কৃষির আধুনিকায়নের পথ’ গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর নথিতে এই পথটি স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়, ‘উন্নত উত্পাদন-প্রযুক্তি, মধ্যপন্থী ব্যবসায়িক স্কেল, শক্তিশালী বাজার প্রতিযোগিতা, এবং টেকসই পরিবেশগত অবস্থার সাথে চীনা বৈশিষ্ট্যময় একটি নতুন কৃষি আধুনিকায়নের পথ তৈরি করতে হবে।”
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি-সম্মেলনে সিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট, ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি শক্তিশালী দেশকে প্রথমে তার কৃষিকে শক্তিশালী করতে হবে; শুধুমাত্র শক্তিশালী কৃষি দ্বারা দেশ শক্তিশালী হতে পারে। কৃষিশক্তি ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না; কৃষি ও গ্রামীণ আধুনিকায়ন ছাড়া সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়ন অসম্পূর্ণ থাকবে। জাতীয় ও কৃষি পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে, চীনা বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলিত করা এবং শক্তিশালী সরবরাহ নিরাপত্তা, শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম, শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী শিল্প স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তিশালী প্রতিযোগিতার সাথে কৃষির শক্ত ভিত্তি তৈরি করা প্রয়োজন। চীন কৃষিশক্তি তৈরি করতে চায় এবং কৃষির আধুনিকায়নের এমন একটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায় যাতে সাধারণ আধুনিক কৃষিশক্তির বৈশিষ্ট্য থাকবে এবং পাশাপাশি নিজস্ব জাতীয় অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চীনা বৈশিষ্ট্যও থাকবে। চীনা বৈশিষ্ট্যের মূল অর্থ হল, চীনের কৃষির আধুনিকায়ন বিশাল জনসংখ্যার আধুনিকায়ন, যে আধুনিকায়ন সকল কৃষকের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসে, বস্তুগত সভ্যতা ও আধ্যাত্মিক সভ্যতার সমন্বয় সাধন করে, প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করে, ও শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলে।
চীন সরকার গ্রাম ও কৃষির আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে অনেক কাজ করেছে ও করছে। এতে বেশ ভালো ফলাফলও অর্জিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সরকার জোরালোভাবে কৃষির আধুনিকায়নের কাজ করেছে, কৃষির উন্নয়নে সমর্থন জোরদার করেছে, এবং উন্নত কৃষি উত্পাদন দক্ষতা ও কৃষিপণ্যের গুণগত মানও উন্নত করেছে। সেই সঙ্গে, সরকার গ্রামীণ শাসন এবং গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবেশ এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে।
“দরিদ্র এলাকায় গ্রামীণ পানীয় নিরাপত্তা উন্নত করতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন দফার গ্রামীণ বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক আপগ্রেডিং প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণকাজ শক্তিশালী হয়েছে। বহু গ্রামীণ এলাকা গ্যাসের আওতায় এসেছে। বায়োগ্যাস বিকাশের জন্য গ্রামীণ জৈব বর্জ্যের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজ চলছে। গ্রামীণ এলাকায় জরাজীর্ণ ভবন সংস্কারের প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় বিদ্যমান জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি সুন্দর এবং বাসযোগ্য গ্রামাঞ্চল তৈরি করতে অনেক চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে আরও রয়েছে গ্রামীণ পরিচ্ছন্নতা প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা, আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিত্সা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন সুবিধার অবস্থার উন্নতি করা। গ্রামীণ নদ-নদী ও জলাশয়ের উন্নতি, জলব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং গ্রামীণ পরিবেশের উন্নয়নে পানি ও মৃত্তিকা সংরক্ষণব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে, চীনের সরকার সর্বদা আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় কৃষির আধুনিকায়নকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখে এসেছে। এতে কেবল যে চীনের আধুনিকায়নের ভিত্তি দৃঢ় হয়েছে, তা নয়; বরং বৈশ্বিক উন্নয়ন ও মানজাতির অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ও রাখছে।